বাংলাদেশের রিজার্ভ পাকিস্তানের দ্বিগুণের পথে

বঞ্চনার শিকার হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ধারায় বিজয়ের ৪৩ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন প্রায় দ্বিগুণ করতে যাচ্ছে ওই দেশটি থেকে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 02:05 PM
Updated : 18 Dec 2014, 07:40 PM

বৃহস্পতিবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন (২ হাজার ২৪০ কোটি) ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের রিজার্ভের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার ৩৮২ কোটি ডলার)।

রেকর্ড রিজার্ভে উৎফুল্ল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৪৩ বছরের ইতিহাসে আজ আমাদের রিজার্ভ সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিজয়ের মাসে এটা আমাদের আরেক বিজয়।”

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি। রিজার্ভ ব্যাংক ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী তাদের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়নের পরিমাণ ৩১৫ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলংকার রিজার্ভ ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

পাকিস্তানে সামরিক শাসন ও জঙ্গি উত্থানের বিপরীতে বাংলাদেশে মাঝে ছেদ ঘটলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার মধ্যে গত কয়েকবছর ধরেই রিজার্ভ বাড়ছিল।

২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ যেখানে ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর ৭ অগাস্ট ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় প্রথমবারের মতো।

এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ডের পর গত ৫ নভেম্বর রিজার্ভ ২২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। বৃহস্পতিবার সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল।

আতিউর রহমান (ফাইল ছবি)

এই পরিমাণ রিজার্ভের জন্য প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় বাড়াই ভূমিকা রেখেছে বলে জানান গভর্নর আতিউর।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।

প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বাংলাদেশের বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনরত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের পাঠানো অর্থও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।

রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে যায়।

৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠে। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করে।

দুই মাস পর পর আকুর বিল পরিশোধ করা হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের আকুর বিল জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হবে। তার আগ পর্য‌ন্ত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

ছাইদুর রহমান বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে টাকার বিপরীতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। সে কারণেও রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে।”

চলতি ডিসেম্বর মাসের ১২ দিনে (১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রবাসীরা দেশে ৫৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স বাড়ে ১১ শতাংশ।

ইপিবির (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশ।

অন্যদিকে অক্টোবর পর্য‌ন্ত অর্থ্যাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। নভেম্বরের আমদানি ব্যয়ের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রিজার্ভ বাড়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।

গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৭৭ টাকা ৮৮ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। এক মাসে আগে এই বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৪০ পয়সা।

রিজার্ভ বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “ডলারের চাহিদা বাড়ায় গত নভেম্বর মাসে আমরা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) বাজারে ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছি। চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করেছি ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।”

তবে গত কয়েকদিন চাহিদা না থাকায় বাজারে ডলার ছাড়া হয়নি বলে জানান ছাইদুর রহমান।