বিমানবন্দরে চোরাচালান রোধে ৩শ’ কোটি টাকা

শাহজালাল ও শাহ আমানতসহ দেশের চারটি বিমানবন্দরে চোরাচালান রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিরাপত্তা জোরদারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2014, 04:08 PM
Updated : 9 Dec 2014, 05:42 PM

গত দুই বছর ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিমানবন্দরে চোরাই সোনার অসংখ্য চালান আটকের মধ্যে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়।

হজরত শাহজালাল ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ যশোর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ অধিকতর নিরাপদ এবং চোরাচালান রোধে নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।”

‘বাংলাদেশ বিমান বন্দরসমূহের সেফ্টি এবং সিকিউরিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিমানবন্দরগুলোর ব্যস্ততা বাড়লেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উড়োজাহার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। ফলে ২৫ বছর পুরনো রাডার দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বলে প্রকল্পের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

“এছাড়া সোনা চোরাচালান রোধসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধ করতে হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি কমপ্রিহেনসিভ সিকিউরিটি সিস্টেম গড়ে তোলা হবে,” বলা হয় কার্যপত্রে।

প্রকল্পের আওতায় হাতে ব্যবহার উপযোগী মেটাল ডিটেকটরসহ বিস্ফোরক সনাক্ত করতে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকটরসহ নানা ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনা হবে। 

“এতে বিমান পরিবহন সেবা কার্যক্রম আরও গণমুখী হবে, চোরাচালানও রোধ হবে,” আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে প্রকল্পের কার্যপত্রে।

শাহজালালের উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে

হজরত শাহ্জালাল বিমানবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যয় ১৪৮ কোটি টাকা বেড়ে ৫৬২ কোটি টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭, ৭৪৭ ও এয়ারবাস ৩৩০ উড়োজাহাজের উঠানামা ও চলাচল সহজ করতে অবকাঠামো উন্নয়নে ২০০৮ সালে এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল সরকার।

প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। এর ব্যয় বাড়িয়ে ৫৬২ কোটি টাকা করার প্রস্তাব একনেকের মঙ্গলবারের সভায় অনুমোদিত হয়েছে।   

২০১৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এই ব্যয়ের মধ্যে ৩২৮ কোটি টাকা দেবে ডেনমার্ক সরকার, বাকি ৮৫ কোটি টাকার সংস্থান হবে সরকারিভাবে।

বিদ্যুতের ২ প্রকল্প অনুমোদন

বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের ১১ জেলার সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার বিদ্যুৎ খাতের দুটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প দুটি হচ্ছে- পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ বরিশাল বিভাগীয় কার্যক্রম-২ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ খুলনা বিভাগীয় কার্যক্রম-২।

প্রকল্প দুটির আওতায় ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন ও ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন পুনর্বাসন করা হবে।

একনেক সভার পর প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী

এ প্রকল্প দুটি সম্পর্কে মুস্তফা কামাল বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ এবং সঞ্চালনকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরা এই ১১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ বাড়াতে প্রকল্প দুটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্প দুটির আওতায় ২৫টি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও স্থাপন করা হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

এছাড়া সভায় দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (২য় সংশোধিত), নতুন ডাকাতিয়া পুরাতন ডাকাতিয়া ছোট ফেনী নদী নিষ্কাশন (দক্ষিণ কুমিল্লা ও উত্তর নোয়াখালী সমন্বিত নিষ্কাশন প্রকল্পের অংশ, ৫ম সংশোধিত), ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত), জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রস্তুতকরণ ও মজবুতীকরণ এবং গ্রামীণ রাস্তায় ছোট ছোট (১২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত) সেতু/কালভার্ট নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পগুলোও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, অনুমোদিত এ প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৪৩৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২২৭৮ কোটি টাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন ১৮৫ কোটি টাকা।