বাড়ছে রপ্তানি আয়

নভেম্বর মাসে দেশের রপ্তানি আয় আবার বাড়তে শুরু করায় অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারক ও অর্নীতিবিদরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2014, 08:14 AM
Updated : 8 Dec 2014, 01:55 PM

গত মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৪১ কোটি ১৭ লাখ ডলার আয় করেছে, যা অক্টোবরের চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। আর রপ্তানি আয়ের এই পরিমাণ গত বছরের নভেম্বর মাসের চেয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও রপ্তানি আয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারকরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে ২৪২ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। অক্টোবরে এর পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার; আর গত বছরের নভেম্বরে ২২১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয় এক শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ের হিসাবে রপ্তানি আয় আগের তুলনায় দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এক হাজার ৭ কোটি (১২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন) ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। যার ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৯৬ কোটি (১১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার।

রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদ ও পূজার ছুটির কারণে অক্টোবর মাসে কয়েক দিন কারখানা বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি আয়ও কম এসেছিল।

“নভেম্বর মাসে সেটা পূরণ হয়েছে। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতেও রপ্তানি আয় বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় কমার বিষয়টি ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রতি বছরই সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডাল সিজনে রপ্তানি আয়ে একটু ধীর গতি থাকে। এবারও তাই ছিল।”

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ থাকলে অর্থবছরের বাকি সময়েও রপ্তানি আয় বাড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতির এই গবেষক।

রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফকেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।

চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩২০ কোটি (৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার। এর মধ্যে জুলাই-নভেম্বর সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৭৩ কোটি ৫৫ লাখ (১২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে জুলাই-নভেম্বর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ কম আয় হয়েছে। তবে নভেম্বর মাসে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে।

জুলাই-নভেম্বর সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৫০০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। তবে উভেন পোশাক থেকে আয় হয়েছে ৪৬৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ কম।

আলোচ্য সময়ে প্লাস্টিক ও মেলামাইন পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কসমেটিকসে বেড়েছে ৩৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, জাহাজ রপ্তানিতে বেড়েছে ৫৬০০ শতাংশ, কম্পিউটার সার্ভিসে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এছাড়া কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে বেড়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাট ও পাট পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান শুভাশিষ বোস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রপ্তানিতে আমরা মোটামুটিভাবে ভালো পর‌্যায়ে আছি। প্লাস্টিক, মেলামাইন, বাইসাইকেল, কমমেটিকস, উলের পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট পণ্য, জাহাজ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ভালো হয়েছে। এর মানে আমাদের পণ্য রপ্তানির রহুমূখীকরণ হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “মূলত চীনে শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগী মূল্যে তারা এখন পণ্য দিতে পারছে না। তাই আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।”