সঞ্চয়পত্রে চার মাসেই লক্ষ্য পার

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৯ হাজার ৭৭ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ কোটি টাকা বেশি।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2014, 06:49 AM
Updated : 26 Nov 2014, 06:49 AM

এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

ঝুঁকিহীন এবং বেশি মুনাফার কারণে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধি সরকারের ঋণের বোঝাকে আরো বাড়াবে বলে তাদের আশঙ্কা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি সংক্রান্ত জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

আগের মাসগুলোতে এর অঙ্ক ছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা; অগাস্টে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জুলাইয়ে ছিল এক হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।

সবমিলিয়ে চার মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৭৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো সঞ্চয়পত্রে এতো বেশি বিনিয়োগ আসেনি। কোন ধরনের ঝুঁকি না থাকায় এবং বেশি মুনাফার জন্য অনেকে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তাদের ধারণা।

এছাড়া, ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার কমে যাওয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের জাল-জালিয়াতির ঘটনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে বলেও মনে করেন তারা।

আকর্ষণীয় মুনাফা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার প্রধান কারণ বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে যাচ্ছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের মুনাফা এখনও আকর্ষণীয়। যে কারণে অনেকেই বিনিয়োগের প্রধান খাত হিসেবে সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিচ্ছেন।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, “সুদ বেশি পাওয়ায় সাধারণ সঞ্চয়ীরা সঞ্চয়পত্রে যাচ্ছেন। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণও কমে যাচ্ছে। এটা বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কেননা সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণের মুনাফা বেশি হওয়ায় সুদব্যয় বেশি হবে এবং এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে আগামী অর্থবছরের রাজস্বের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যাবে।”

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে তা প্রায় দুইগুণ বাড়িয়ে আট হাজার কোটি টাকা করা হয়। ওই অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

তবে এর আগের (২০১২-১৩) অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে তেমন সাড়া ছিল না। ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৭৭২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে চলতি অর্থবছরে সরকার ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।