গুসি শান্তি পদকজয়ীদের আগাম সংবর্ধনা ম্যানিলায়

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানসহ শান্তি পদকজয়ীদের আগাম সংবর্ধনা দিয়েছে গুসি ফাউন্ডেশন।

আবদুর রহিম হারমাছি ম্যানিলা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 01:49 PM
Updated : 24 Nov 2014, 01:54 PM

দারিদ্র্য কমিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য সারা বিশ্বের ১৫ জনকে সম্মানিত করেছে ম্যানিলাভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান।

বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিত্বদের ২০০২ সাল থেকে সম্মানিত করে আসছে ফিলিপিন্সের দাতব্য প্রতিষ্ঠান গুসি ফাউন্ডেশন, যা ক্যাপ্টেন জেমেনিয়ানো জাভিয়ের গুসির নামে রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই মানবাধিকারকর্মীর ছেলে ব্যারি এস গুসি বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যান।

সোমবার সকালে ম্যানিলার চাইনিজ জেনারেল হসপিটাল মিলনায়তনে আগাম সংর্বধনা অনুষ্ঠানে ব্যারি এস গুসি বলেন, “যারা দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেন তাদের সম্মানিত করতেই এই পুরস্কার। এবার যে ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে তারা সবাই নিজ নিজ দেশে এই অসহায় মানুষগুলোর জন্য কাজ করেছেন।

“গুসি পুরস্কার তাদের এ মহতী উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

এবারের শান্তি পুরস্কার পাওয়াদের মধ্যে আতিউর রহমান, ভারতের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা অচ্ছুত সামন্ত ও এবং চীনের হেনরি ফক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনসন ফক ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কঙ্গো, জার্মানি, ইরান, ইতালি, জাপান, লিথুনিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড ও সৌদি আরবের ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন।

অচ্ছুত সামান্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ভারতের উড়িষ্যায় ২২ হাজার ৫০০ আদিবাসী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীকে বিনা বেতনে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছি। এ কাজের জন্যই আমাকে গুসি শান্তি পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।

ষাট বছর বয়সী অবিবাহিত এই ব্যক্তি দরিদ্র্য আদিবাসীদের কল্যাণেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।

“দরিদ্র্যকে আমি শিক্ষার মাধ্যমে দূর করার চেষ্টা করছি। এটা আমি মেগা স্কেলে করছি.....। স্ট্যান্ডার্ড ওয়ান থেকে পোস্ট গ্যাজুয়েট পর‌্যন্ত দরিদ্র্য শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য আমি কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশাল সায়েন্সেস প্রতিষ্ঠা করেছি।”

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে আতিউর রহমানের গুসি শান্তি পদক পাওয়া নিয়ে ম্যানিলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সেখানে গভর্নর বলেন, “দরিদ্রদের নিয়ে কাজ করার জন্যই আমাকে গুসি শান্তি পদক দেওয়া হচ্ছে। ছয় বছর আগে আমি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেই তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মানবিক ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজ সেটা সফল হতে চলেছে।

“আর সেই সাফল্যের গল্প শোনাতেই আজ আমি ম্যানিলায় এসেছি। আরও যারা ১৪ জন গুসি পদক পাচ্ছেন তাদের সবার সঙ্গে আমি সেই গল্প শেয়ার করতে চাই। যাতে বাংলাদেশের এই সাফল্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।”

আতিউর বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব ঘটেছে। রাজধানী ঢাকার ৭৮ হাজার রিকসাচালক এখন মোবাইলের মাধ্যমে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠান। এক সেকেন্ডের মধ্যে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠাতে পেরে খুবই খুশি তারা।

১০ টাকায় কৃষক, স্কুলের ছাত্র, গার্মেন্ট শ্রমিক ও পথ শিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অসংখ্য ছোটো-ছোটো উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে, যারা কোনো ধরনের জামানত ছাড়ই ঋণ পাচ্ছে।

“অর্থ্যাৎ দরিদ্র্য মানুষকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার ইতিবাচক ফল বাংলাদেশ পাচ্ছে।”

 “গুসি পুরস্কার এ সব কর্মকাণ্ডেরই সাফল্য হিসেবে আমি মনে করি। আর এ গল্পই আমি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই।”

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো গভর্নর গুসি ফাউন্ডেশনের সম্মাননা পাচ্ছেন। গুসি শান্তি পুরস্কার নিতে রোববার সকালে ম্যানিলায় এসেছেন আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, “এটা আমার পুরস্কার নয়; আমি যাদের জন্য কাজ করি এবং যাদের নিয়ে কাজ করি তাদের পুরস্কার। মানবিক অর্থনীতির জন্য দরিদ্র মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার যে চেষ্টা আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে করছি- এটা তারই পুরস্কার।”

সংবাদ সম্মেলনে ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গমেজ বলেন, “বাংলাদেশ এবং ফিলিপিন্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে সে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে বলে আমি আশা করি।

“আর এর মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে।”

২৬ নভেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ফিলিপিন্স ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে মনোনীত ১৫ জনের হাতে গুসি শান্তি পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

আতিউর রহমান গুসি শান্তি পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি। তার আগে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানবিক কার্যক্রমের জন্য ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওরের (ডিওআরপি) মহাসচিব এএইচএম নোমান।