গুসি পুরস্কার নিতে ম্যানিলায় গভর্নর  

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ফিলিপিন্সের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দেওয়া শান্তি পুরস্কার নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এখন ম্যানিলায় অবস্থান করছেন।

আবদুর রহিম হারমাছি ফিলিপিন্স (ম্যানিলা) থেকে, প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 05:00 PM
Updated : 23 Nov 2014, 05:00 PM

ম্যানিলাভিত্তিক গুসি পিস প্রাইজ ফাউন্ডেশন ‘আন্তর্জাতিক গুসি শান্তি পুরস্কার-২০১৪’ –এর জন্য আতিউর রহমান মনোনীত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান পুরস্কার নিতে রোববার সকালে ম্যানিলায় পৌঁছান ।

২৬ নভেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ফিলিপিন্স ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে তিনিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট ১৫ জনকে এই পুরস্কার নিবেন, যারা সবাই এখন ম্যানিলায় অবস্থান করছেন।

রোববার সন্ধ্যায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রধান কার্যালয়ের স্টাফ কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারপারসন ড. মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ তার বাসায় আতিউর রহমানের গুসি শান্তি পুরস্কার গ্রহনের আগে এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

পারভেজ ইমদাদ বাংলাদেশের নাগরিক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ম্যানিলায় এডিবি’র প্রধান কার্যালয়ে চাকরি করছেন।

অনুষ্ঠানে আতিউর রহমান ছাড়াও গুসি পিস প্রাইজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বারি এস গুসি এবং পুরস্কারের জন্য মনোনীত চীনের হেনরি ফক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনসন ফক বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আতিউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব ঘটেছে। ৭৮ হাজার রিকশাচালক এখন মোবাইলের মাধ্যমে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠান। বাংলাদেশের সব মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে (ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) দশ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়েছে।

“স্কুলের ছাত্র থেকে শুরু করে গার্মেন্ট শ্রমিক, পথ শিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দরিদ্র মানুষকে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার ইতিবাচক ফল বাংলাদেশ পাচ্ছে।”

“গুসি পুরস্কার এ সব কর্মকাণ্ডেরই সাফল্য হিসেবে আমি মনে করি,” বলেন আতিউর।    

তিনি বলেন, “এটা আমার পুরস্কার নয়। আমি যাদের জন্য কাজ করি এবং যাদের নিয়ে কাজ করি তাদের পুরস্কার এটি। মানবিক অর্থনীতির জন্য দরিদ্র মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার যে চেষ্টা আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে করছি- এটা তারই পুরস্কার।”

গভর্নর বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি ছোটো-ছোটো উদ্যোক্তা তৈরি, দশ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করাসহ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংক হিসাবও খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক এবং পথ শিশুদেরও ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।”

এই পুরস্কার এসব কাজেরই স্বীকৃতি বলে মন্তব্য করেন আতিউর।

বারি এস গুসি বলেন, “গুসি শান্তি পুরস্কার পৃথিবীর অন্য যেকোন পুরস্কার থেকে আলাদা। নোবেল পুরস্কার মূলতঃ পশ্চিমা দেশগুলোর লোকজনই বেশি পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের মতো লোকেরা মাঝে-মধ্যে নোবেল পুরস্কার পেয়ে থাকেন।

“কিন্তু গুসি শান্তি পুরস্কার গ্লোবাল...। সারা পৃথিবীর মানুষকেই পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। সমাজে সমতা আনার জন্য যারা কাজ করেন তাদেরকেই গুসি পুরস্কারের জন্য মনোনিত করা হয়।”   

আতিউর রহমান গুসি শান্তি পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি। এর আগে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানবিক কার্যক্রমের জন্য ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অফ রুরাল পুওর (ডিওআরপি)- এর মহাসচিব এ এইচ এম নোমান।

শান্তি ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের আতিউর রহমান ও চীনের মনসন ফক ছাড়াও এবার অস্ট্রেলিয়া, কঙ্গো, ভারত, জার্মানি, ইরান, ইতালি, জাপান, লিথুনিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড ও সৌদি আরবের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই পুরস্কার নিবেন।

অনুষ্ঠানে ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জন গমেজসহ এডিবি প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।