অবিলম্বে ‘সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তি’র বাস্তবায়ন  দাবি

দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন ও বীজসঙ্কট নিরসনে ‘সার্ক বীজ ব্যাংক চুক্তি’ দ্রুত বাস্তবায়নেরে দাবি জানিয়েছ কয়েকটি বেসরকার সংস্থা ও কৃষক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 06:44 PM
Updated : 20 Nov 2014, 06:44 PM

পাশাপাশি বীজ উৎপাদনকারী কৃষকদের এ ব্যাংকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করারও দাবি তুলেছে তারা।

রাজধানীর পল্টনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

২৬ ও ২৭ নভেম্বর নেপালের কাঠমাণ্ডুতে সার্ক সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি-বাংলাদেশ), স্বাধীন কৃষক সংগঠন (এসকেএস), কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী (কেকেএম) ও অ্যাকশন এইড।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খানি-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পৃথিবীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ এবং পুষ্টিহীনতায় ভোগা মানুষের ৩৫ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করে। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ এ অঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়ে ২২০ কোটি হয়ে যাবে।

অন্যদিকে জলবায়ু দুর্যোগের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এর ফলে, খাদ্যঘাটতি ও ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়বে।

দক্ষিণ এশিয়ার পল্লী এলাকায় বসবাসকারী গরিব মানুষের জন্য এ প্রতিক্রিয়া আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কেননা প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠী সরাসরি কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ।

“এছাড়া বর্তমানে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ বীজ সম্পদ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে আসে। চার বছর পার হয়ে গেলেও ‘সার্ক বীজ ব্যাংক’ চালু করা হয়নি। এ বীজ ব্যাংক চালু করা না হলে জলবায়ু এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষকরা বর্তমান অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে।”

লিখিত অভিযোগ করা হয়, “এ ব্যাংকে সার্ক অঞ্চল থেকে মাত্র একজন প্রতিনিধি অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হলেও ২ জন বেসরকারি কোম্পানি প্রতিনিধি রাখা হয়েছে, যা কৃষকদের অংশগ্রহণের অধিকার সঙ্কুচিত করেছে।

“বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও)’ মেধা স্বত্ত্বাধিকার চুক্তির আওতায় কৃষকদের লোকজ জ্ঞান সুরক্ষিত করা হয়নি।”

সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে- ‘সার্ক বীজ ব্যাংক’ কার্যকর করা; লোকজ বীজ সংরক্ষণ, ব্যবহার, বিনিময় ও বিক্রির অধিকার কৃষকদের হাতে দেয়ার বিধান করা; বেসরকারি কোম্পানিদের হাত থেকে কৃষকদের বীজসম্পদ রক্ষা করা; বীজ ব্যাংক বোর্ডে প্রতিটি সদস্য দেশ থেকে কমপক্ষে ১ জন করে কৃষক প্রতিনিধি এবং বেসরকারি প্রতিনিধিদের ভেতর ১জন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা; কৃষকদের লোকজ বীজের লাভজনক মূল্য নির্ধারণকরা; যেকোনো দেশের সঙ্কটের সময় দ্রুততার সাথে ব্যাংক থেকে বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা; মাঠপর্যায়ে কৃষকদের গবেষণার স্বীকৃতি ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশীয় কৃষকদের মেলবন্ধন তৈরির অধিকার সৃষ্টি করা।

২০১১ সালে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে সার্কভুক্ত দেশগুলো ‘বীজ ব্যাংক চুক্তি’ সই করে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খানি-বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মিহির বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ শ্যামল কান্তিবোস, সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাসান মেহেদী, একশন এইড-এর অমিত রঞ্জন দে, নাগরিক সংহতির শরিফুজ্জামান শরিফ, স্বাধীন কৃষক সংগঠনের সভাপতি রোবায়েত মোল্লা, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ, ইনসিডিন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহমান সাব্বির প্রমুখ।