দুর্নীতি-অপচয়ে আটকে এডিপির সুফল, স্বীকার মন্ত্রীর

উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর এডিপিতে বিপুল বরাদ্দ রাখা হলেও দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে তার সুফল জনগণ পর্যন্ত পৌঁছায় না বলে  স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 02:53 PM
Updated : 20 Nov 2014, 06:21 PM

“এডিপিতে ৮০ হাজার টাকা খরচ করি। এ টাকা যায় কোথায়? কত বছর লাগে এদেশের চেহারা পাল্টাতে। কিন্ত দুর্নীতি আছে, অপচয় আছে। আবার আমরা সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এসব কারণে সরকারি ব্যয়ের পুরো সুফল দেশ পাচ্ছে না,” বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ: উন্নয়ন সম্ভাবনা ও অবকাঠামো চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন মুস্তফা কামাল।

প্রতি বছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হলেও তার অপব্যবহার নিয়ে অভিযোগ বিভিন্ন সংগঠনের বহু দিনের। এডিপি বাস্তবায়নের গতিও ছিল ধীর, তবে গত কয়েক বছর বাস্তবায়নের হার ৯০ শতাংশের বেশি।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “কাজ যে হচ্ছে না তা নয়, তবে একটু ধীর গতিতে হচ্ছে।”

অবকাঠামো নিয়ে এই আলোচনা সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার কাজের ধীর গতির একটি ব্যাখ্যাও দেন কুমিল্লার এই সংসদ সদস্য।

“নানান কারণেই এই সড়ক নির্মাণে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে রাস্তা যেখান দিয়ে যাবে, সেখানে মাজার আছে, মসজিদ আছে। সেগুলো সরানোর বিষয়ে স্থানীয় লোকজনদের আপত্তি ছিল। এখন এসব বিষয় ঠিক হয়ে গেছে। আশা করছি, এখন দ্রুত কাজ হবে।”

যথাযথ অবকাঠামো থাকলে দেশের সম্ভাবনার জায়গাগুলো আরো বিকশিত হত বলে মনে করেন মুস্তফা কামাল।

“স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও আমরা আমাদের কয়লা উত্তোলন করতে পারিনি।মাটির নিচে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের কয়লা পড়ে আছে। নানান বাধা বিপত্তির কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি, কোন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করবো। অথচ আমাদের জ্বালানি সঙ্কট আছে।”

দৈনিক বণিক বার্তা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদ (বিআইডিএস) আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান।

সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সরওয়ার, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমীন, ডিএসইর সিইও স্বপন কুমার বালা প্রমুখ।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুশীল সমাজের সমালোচনাও করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “স্থিতিশীলতার জন্য সুশীল সমাজ ভেরি ইমপর্টেন্ট ফ্যাক্টর। কিন্তু তারা শহরে বসবাস করে। সমাজের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে। তাদের সাথে সুশীল প্রতিনিধিদের যোগাযোগ নেই।

“তারা আবার আমাদের (রাজনীতিবিদ) বলছে, দেশের বা জনগণের প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমরা জনগণের কাছে যাই। জনগণ সরকারের পক্ষে আছে।সরকার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিচ্ছে।”

ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হলে সামষ্টিক উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে। তার মধ্যে ঠিক করে নিতে হবে কোনটা আগে দরকার, কোনটা পরে করা হবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন অবশ্যই সবার আগে দরকার।

“তবে যে পরিকল্পনাই নেওয়া হোক তা হতে হবে কর্মসংস্থানবান্ধব এবং বৈষম্যহীন,” বলেন তিনি।

ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আরাস্তু খান বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে রাজস্ব আয়ের বিশাল যোগসূত্র রয়েছে। সম্প্রতি রাজস্ব আয় বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হবে।