খেলাপি ঋণে ছাড় পাবে না কেউ: গভর্নর

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, আইনের বাইরে কোনো খেলাপি প্রতিষ্ঠানকেই কোনো সুবিধা বা ছাড় দেওয়া হবে না।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 10:39 AM
Updated : 19 Nov 2014, 10:39 AM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “যে করেই হোক খেলাপি ঋণ আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনবই। এটা আমার একটা স্বপ্ন।”

দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে মুষ্টিমেয় কিছু ঋণগ্রহীতার হাতে। তাদের কেউ কেউ বিশেষ সুবিধাও চেয়ে আসছে। তবে গভর্নর বলছেন, কোনো কিছুতেই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।   

এ জন্য ব্যাংকগুলোকে ‘ভালো মানের’ ঋণ দিতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রভাবশালীদের ‘খবরদারি’ বন্ধে ‘অপেক্ষাকৃত ভাল এমডি ও পরিচালনা পর্ষদ’ নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

গত প্রায় ছয় বছর ধরে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসা আতিউর রহমানের দাবি, দেশের ব্যাংক খাত এখন ‘অনেকটাই স্থিতিশীল’ এবং এর ইতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়ছে।

এই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির দক্ষতা বেড়েছে এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য গত সপ্তাহেই ফিলিপিন্সের গুসি শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। দেশের ব্যাংক খাতের পাশাপাশি অর্থনীতির নানা দিক নিয়েও সাক্ষাৎকারে তিনি আলোচনা করেছেন।

২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল চার বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান আতিউর রহমান। এরপর তাকে আরো এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার।

 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?

আতিউর রহমান: আমি মনে করি আমাদের ব্যাংক খাত এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। লিকুইডিটির (তারল্য) অবস্থা ভাল। লোকে টাকা পাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে কলমানি রেট ৬ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। এমনকি দুই ঈদের মধ্যেও কলমানি রেট বাড়েনি। অথচ এর আগে দেখা গেছে ঈদ সামনে রেখে কলমানি রেট একশ-দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও (ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট) বেশ কিছু দিন ধরে স্থিতিশীল। এ কথা ঠিক যে এই বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) বাজার থেকে ডলার কিনেছি। এটা করেছি মূলত রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে…। তবে এখন আর আমরা বাজার থেকে ডলার কিনছি না। আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। ডলারের চাহিদাও বেড়েছে।

আমদানি বাড়লে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে যে চাপ পড়বে তাতে লেনদেন ভারসাম্য ঋণাত্মক হতে পারে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

এ বিষয়ে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। ভয়ের কিছু নেই। আমদানি বাড়া আমাদের অর্থনীতির জন্য ভাল লক্ষণ। আমাদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। তারা এখন বিনিয়োগ করছেন। সে কারণেই মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বাড়ছে। আমরা একে স্বাগত জানাই। এ কথা ঠিক যে আমদানি বাড়লে রিজার্ভে চাপ পড়বে। কিন্তু তাতে সমস্যা কী? আমাদের রিজার্ভে তো ২২ বিলিয়ন ডলার আছে।

এখানে আমি আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমদানি বাড়ার কারণে আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স (লেনদেন ভারসাম্য-বিওপি) হয়তো নেগেটিভ (-) হয়ে যাবে। তাতে কিছু যায়-আসে না। পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে; বিওপি নেগেটিভ হলেও সমস্যা নেই। বিনিয়োগ বাড়াটাই আসল কথা। আমরা যদি আমাদের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব বেশিরভাগ সময়ই আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স নেগেটিভ ছিল। আমাদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে ২২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ।

ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ (বিনিয়োগ হচ্ছে না এমন অর্থ) পড়ে আছে। তারপরও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না কেন?

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে না- এ কথা ঠিক নয়। গত অর্থবছর বেসরকারি খাতে আমাদের ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের মতো। এর বাইরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিদেশি ঋণও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ দুটো যোগ করলে প্রবৃদ্ধি হয় ১৫ শতাংশের মতো। মুদ্রানীতিতে আমরা বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরেছি ১৬ শতাংশ। সেই প্রবৃদ্ধিতে আমরা অবশ্যই পৌঁছাব।

আপনি বলছেন, ব্যাংক খাত স্থিতিশীল। কিন্তু খেলাপি ঋণ তো বাড়ছে।

হ্যাঁ, এ কথা ঠিক, খেলাপি ঋণ বাড়তির দিকে। এর একটি বড় কারণ এখন আমরা গ্লোবাল পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণের হিসাব করছি। নতুন হিসাব পদ্ধতির কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে এটাও ঠিক যে গত বছরের শেষ দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ শোধ করতে না পারায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

তবে যে করেই হোক খেলাপি ঋণ আমরা ‘সিঙ্গেল ডিজিটে’ নামিয়ে আনব। এটা আমার একটা স্বপ্ন।

সেটা কীভাবে করবেন?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ‘ভালো মানের’ ঋণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরাবরই এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে আমরা এবার এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। কোনো মহল বা ব্যক্তি যাতে কোনো ধরনের ‘খবরদারি’ করতে না পারে সেজন্য সরকারি ব্যাংকগুলোতে এবার অপেক্ষাকৃত ভাল এমডি ও পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক বলে আমি মনে করি।

অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর ঋণ অনুমোদন করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাকে খুশি তাকে বা রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। ভালো মানের ঋণ দিতে হবে। ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে পারবে- সেটা নিশ্চিত হওয়ার পরই ঋণ অনুমোদন করতে হবে। অযৌক্তিক কারণে কোনো ঋণ খেলাপি হলে তার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই ব্যাংককে নিতে হবে- এ বিষয়টি আমরা বার-বার ব্যাংকগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।

এর আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হতো। তারপরও খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে পারেনি কেন?

আমি বার বার বলছি, আগের প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘সুপারভিশন’ ব্যবস্থায় আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। এক ধরনের ‘আর্লি ওয়ার্নিং’ ব্যবস্থা নিয়েছি। অর্থাৎ যে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি সঙ্গে সঙ্গেই যাতে ধরা পড়ে সে ব্যবস্থা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা এই ‘তদারকি বা সুপারভিশন’ পরিচালনা করছে। এই টিমে অনেক নতুন ছেলে-মেয়েকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই এরা ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করছে। যেখানে অনিয়মের গন্ধ পাচ্ছে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে।

আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি ‘অভিযোগ কেন্দ্র’ খুলছি। সেখানে প্রতিদিনই গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। এ পর্যন্ত সাত হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে আমাদের পরিদর্শন বা সুপারভিশন টিম ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এতো কিছুর পরও সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি বার বার সামনে চলে আসে।

হ্যাঁ, সোনালী ব্যাংকে হল-মার্কের ঋণ অনিয়মের ঘটনা আমাদের ব্যাংক খাতের সুনাম অনেকটাই ক্ষুণ্ন করেছে। আমি এ বিষয়ে দুটি কথা বলতে চাই। এই ঋণ অনিয়মের ঘটনা কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দলই প্রথম ধরেছিল। আর এ থেকে শিক্ষা নিয়ে ‘এ ধরনের ঘটনা’ যাতে আর একটিও না ঘটে সে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুপারভিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কোনোভাবে, কোনো ক্ষেত্রেই কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে আমি আরেকটি কথা বলতে চাই। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ‘পর্যবেক্ষক’ নিয়োগ দিচ্ছি। এতে করে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে আমি আশা করি।

[কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

এর আগে এপ্রিল-জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৩৪৪ কোটি ৬৩ লাখ, যা ছিল ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।]

সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময়ের আবেদন করায় আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

হ্যাঁ, কিছু কিছু বড় প্রতিষ্ঠান তাদের অবস্থা খারাপ দেখিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলসহ কিছু সুবিধা চেয়ে ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়েছে। তবে আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে চাই না। রাজনৈতিক বা যৌক্তিক কোনো কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হতেই পারে। আমাদের সবার জানা আছে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক ভালো করে যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের মধ্যেই যা করার তা করবে। আইনের বাইরে কাউকে কোনো ছাড় দিলে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিষ্কার বক্তব্য হচ্ছে, যা কিছু করা হবে তা আইনের মধ্যে থেকেই করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়লে অবশ্যই ব্যাংক তাকে উদ্ধার করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রতিষ্ঠানটি যা চাইবে- তাই করতে হবে। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোনো ছাড় দিলে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

[গত ৫ অগাস্ট দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যতিক্রমী এক প্রস্তাব দেন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। সঙ্গে দেওয়া হয়, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি করে দেয়া ঋণ পুনর্গঠনের বিস্তারিত প্রস্তাব।

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারার কারণে বেক্সিমকো গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ‘খারাপ অবস্থায়’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই আবেদনে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের প্রস্তাব পেয়ে ১৯ অগাস্ট এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাত ব্যাংকের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। ব্যাংকগুলো হলো-  সোনালী ব্যাংক, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, ন্যাশনাল, এক্সিম ও এবি ব্যাংক লিমিটেড।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনটি সভায় এই বিশেষ সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। ৩ নভেম্বর বিশেষ সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয় পর্ষদ।

বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ৯৮২ কোটি টাকা। বেক্সিমকোর আবেদনে এ অর্থ পরিশোধে গ্রুপটিকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য দুই বছর পর থেকে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর হবে।

অন্য ছয় ব্যাংক এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এর বাইরে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেক্সিমকোর ঋণ রয়েছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাওনা ৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা।

এর বাইরে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা মিলিয়ে বেক্সিমকোর মোট দেনার পরিমাণ ৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।]

 

ব্যাংক খাত নিয়ে বললেন। এবার আপনার কাছে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চাইব।

আমার বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি মজবুত ভিক্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। আমাদের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই এখন ইতিবাচক। বিনিয়োগে একটু মন্দাভাব ছিল। সেটাও কেটে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার মধ্যে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ-এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে।

গত ১০ থেকে ১২ অক্টোবর ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভাতেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনি কতোটা সন্তুষ্ট?

আমি কিছু তথ্য দিচ্ছি। তাতেই আমার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আমার মুখ দিয়ে কিছু বলতে হবে না।

২০০৯ সালে আমি যখন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেই, তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এখন সেই রিজার্ভ প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ৭৫ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আমরা মুদ্রানীতিতে বলেছিলাম,  চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। দেশে যদি এখনকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে এবং বিশ্ব বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে সেটা সম্ভব হবে বলেই আমি মনে করি।

আমি একটি বিষয় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই। গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ফাইনানশিয়াল ইনক্লুশন’ দেশের ব্যাংক খাতের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষকসহ দশ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় দুই কোটিতে। এক সেকেন্ডেই মানুষ যেখানে খুশি সেখানে টাকা পাঠাতে পারছে।

শহরের পাশপাশি গ্রামেও ব্যাংকের শাখা বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি ঋণের পরিমাণ। এ সবই আমাদের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছে বলে আমি মনে করি।