রাজধানীর বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বড় প্রকল্প

রাজধানীর বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার ৮৫৪ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে, যে অর্থ প্রধানত সঞ্চালন লাইনের উন্নয়নে ব্যয় হবে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2014, 04:32 PM
Updated : 18 Nov 2014, 04:32 PM

‘আশুগঞ্জ-ভুলতা ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের কার‌্যপত্রে বলা হয়েছে, আশুগঞ্জ গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে বিশেষ করে বাখরাবাদ এবং জিটিসিএল স্থাপনায় বেশ কিছু পাইপ লাইন একত্র হয়েছে। আশুগঞ্জে গ্যাসের চাপ বেশি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

“এজন্য আশুগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় আরও কিছু গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উক্ত এলাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ অবমুক্ত করে সরবরাহ করা গেলে ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধসমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।”

আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইড সাইকেলের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ অবমুক্ত করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে রামপুরা ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্র দিয়ে ঢাকা শহরে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহও করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জ থেকে ভুলতা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি দ্বৈত সার্কিট সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হবে।

ভূলতা হরিপুর-রামপুরা ২৩০ কেভি দ্বৈত সার্কিট লাইন-ইন এবং লাইন-আউট স্থাপন এবং ঘোড়াশাল-রামপুরা ২৩০ কেভি দ্বৈত সার্কিট লাইন-ইন এবং লাইন-আউট স্থাপন করা হবে।

এছাড়া প্রকল্পের অধীনে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ৪০০/২৩০ কেভি, ২৫০ এমভিএ এআইএস দুটি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। 

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬৭৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২১৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পের কার‌্যপত্রে বলা হয়েছে, “প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে এবং ২x৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অবমুক্ত করা সম্ভব হবে।”

প্রকল্প এলাকা হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা।

সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত বস্ত্রের উন্নয়নে ফ্যাশন ডিজাইন, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও একটি বেসিক সেন্টার স্থাপন। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে নরসিংদী সদরে একটি ফ্যাশন ডিজাইন ও ট্রেনিং ইনস্টিটিটিউট এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

মদন-খালিয়াজুড়ি সাবমার্জিবল সড়ক নির্মাণ এবং নেত্রকোণা–মদন খালিয়াজুড়ি সড়কে বালাই নদীর ওপর পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পও একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। যা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ১ লাখ টাকা।

সভায় ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিভাগের ৬০টি তদন্ত কেন্দ্র টাইপ প্ল্যানে নির্মাণ প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি সংস্কার ও আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।

এছাড়া ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকার মডার্নাইজেশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং দ্য ডিপার্টমেন্ট অব ইন্সপেকশন ফর ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্টস অ্যান্ড এস্টাবলিশমেন্ট অব নাইন ডিস্ট্রিক্ট অফিস প্রকল্পটিও একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সাত প্রকল্পের মোট ব্যয়ের এক হাজার ১০৩ কোটি টাকার সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। বাকি ২৫১ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।