রেমিটেন্স ও পোশাক শিল্প নিয়ে গবেষণার পরামর্শ

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকা শক্তি রেমিটেন্স এবং তৈরি পোশাক নিয়ে নানা আঙ্গিকের গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2014, 06:14 PM
Updated : 15 Nov 2014, 06:14 PM

এই দুটি খাত নিয়ে গবেষণা না দেখে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন পোশাক শ্রমিক এবং প্রবাসীরা।

“অথচ তাদের নিয়ে বা তাদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে নানা আঙ্গিকে বিস্তারিত গবেষণা নেই। নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের আগে এ দুটি বিষয়ে ব্যাপক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।”

শনিবার বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গবেষণার চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ইকোনমিস্ট ফোরাম ( বিইএফ) এ আলোচনার আয়োজন করে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এমিরেটাস ফেলো অধ্যাপক ইসলাম বলেন, “পোশাক খাতের সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো এর নিরাপত্তা মানকেন্দ্রিক। কিন্তু এর বাইরে আরও নানা আঙ্গিক যেমন- এ খাতে সরকারের নানা প্রণোদনা ও ভর্তুকি নিয়ে গবেষণা হতে পারে।”

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নিয়েও উল্লেখ করার মতো সমীক্ষা বা গবেষণা আমার চোখে পড়েনি।”

এছাড়া সামাজিক অসমতা, শিক্ষার মান, সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা বিষয়ে গবেষণার তাগিদ দেন তিনি।

“শিক্ষার হার বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় গবেষণার জন্য অপর্যাপ্ত ও  অসামঞ্জস্যপূর্ণ ডাটা বড় বাধা বলে আমি মনে করি।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় বাংলাদেশে এসেছে। যার ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একই অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন।

এই রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ের ওপর ভর করেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চাল রফতানির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম বলেন, “চালের আন্তর্জাতিক বাজার খুবই বহুমুখী। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাজনিত ভালো গবেষণা প্রয়োজন।”

বাংলাদেশে অ-কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প নিয়েও ‘ভালো (সিরিয়াস)’ গবেষণা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো প্রণয়নের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত থাকা নূরুল ইসলাম শুরুর দিকেই বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মাঝে-মাঝে বাংলাদেশে আসেন। তার এবারের আগমনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সংগঠন আলোচনার আয়োজন করছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, নানা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। গ্রামে গঞ্জে গেলে সচক্ষে তা দেখা যায়।

“সুতরাং সব ডাটা বা উপাত্তই অসত্য, এমনটি আমি মনে করি না।”

এম সাইদুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পদ্মা সেতুসহ ‘ফার্স্ট ট্র্যাক’ প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা।

গভর্নর আতিউর রহমান তরুণ গবেষকদেরকে ভালো মানের গবেষণায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অনেক বেশি।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আলমগীর, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমদ এবং বিআইডিএসের মহাপরিচালক  মোস্তফা কে মুজেরি।