বিনিয়োগ কেন বাড়ছে না, বুঝছেন না মুহিত

অনুকূল পরিবেশ ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের হাতে অঢেল অর্থ থাকার পরও তা কেন বিনিয়োগে আসছে না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেও পাচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 03:34 PM
Updated : 30 Oct 2014, 04:00 PM

বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা পদক্ষেপ নিয়েও হতাশ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের ইনভেস্টমেন্ট ইজ ভেরি লো। যে পটেনশিয়াল আছে তার চেয়েও কম। বিদেশি বিনিয়োগ কিছু আসছে, কিন্তু ডমিস্টিক বিনিয়োগ হচ্ছে না।

“আমাদের উদ্যোক্তাদের হাতে টাকা-পয়সাও অনেক আছে। দেশে এখন স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিরাজ করছে। কিন্তু কেনো তারা বিনিয়োগ করছেন না, চিন্তা করেও বের করতে পারছি না।”

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট গুডস অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে মুহিত তার এই হতাশা তুলে ধরেন।

“দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকার পরও আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা কেন বিনিয়োগ করছেন না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কেন তারা বিনিয়োগ করছেন না- আই ডোন্ট নো।”

গত বছরজুড়ে রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই শান্ত।

বর্তমান পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে বিনিয়োগকারীদের সরকার বলে এলেও ঋণদাতা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পুনরায় সংঘাতের আশঙ্কা করছে।     

বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ‘অনিশ্চয়তার’ কারণ দেখানো ‘বোগাস’ বলেও উড়িয়ে দেন মুহিত।

“বিনিয়োগকারীরা বলছেন- অনিশ্চয়তার কারণে তারা বিনিয়োগ করছেন না। কিন্তু আমি এর কোনও যৌক্তিকতা দেখি না। এটা বোগাস কথা।”

বিনিয়োগ না বাড়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে আটকে আছে, বলেন মুহিত। এরপর আবার বিনিয়োগে খরা নিয়ে হতাশা ঝরে তার কণ্ঠে।

“৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অর্থনীতির সব সূচকই ভালো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগে মন্দা কাটছে না।”

দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে জরুরিভিত্তিতে কোনও উদ্যোগ নেবেন কি না- বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

দেশে বিনিয়োগ না হয়ে মালয়েশিয়া, দুবাইসহ অন্যান্য দেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হতে পারে। তবে এর কোনও প্রমাণ নেই। তথ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলে এ বিষয়ে কিছু বলা উচিৎ হবে না। কেননা, এটি একটি সেনসেটিভ বিষয়। যেগুলোর প্রমাণ পেয়েছিলাম, সে টাকা কিন্তু দেশে আনা হয়েছে।”

‘বোগাস মুভমেন্ট’

বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের হুমকিকে স্বভাবসুলভ শব্দ ‘বোগাস’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিত।

জামায়াতের ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ থেকে হরতাল উঠে যাবে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন হরতাল ডাকলেও হবে না। মানুষ হরতাল মানবে না; প্রত্যাখ্যান করবে।

“খালেদা জিয়া-ফখরুল অনবরত বক্তৃতা করেই যাবে, দেশও এগিয়ে যাবে। তার মুভমেন্ট, জাস্ট বোগাস।”

‘আমি সভা মন্ত্রী’

বৈঠকে পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের সমিতির চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম খান রপ্তানিতে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে এ খাতের রপ্তানিতে ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা চান অর্থমন্ত্রীর কাছে।

গত ছয় বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মুহিত এ সময় তাদের কাছে জানতে চান, এর আগের তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল কি না?

এটিই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম বৈঠক জানানো হলে বিস্ময় প্রকাশ করে মুহিত বলেন, “বলেন কী? আমি সভা মন্ত্রী। খালি সভা করি। এমন কোনও খাত নেই, যাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমি বৈঠক করিনি। আর আপনারা আমার সঙ্গে একটা বৈঠকও করেননি।

“ভয়ংকর রকম আশ্চর্য ব্যাপার এটি। পাট আমাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত। অথচ এই খাতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আমি একটি বৈঠকও করিনি!”

পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রপ্তানিকারকদের ৩ শতাংশ নগদ সহায়তার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।