‘গণতন্ত্র বাংলাদেশের উন্নয়নে কোনও শর্ত নয়’

সুশাসন, জবাবদিহিতা ও নেতৃত্বের দূরদর্শিতা থাকলে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়নে গণতন্ত্র কোনও ‘শর্ত’ নয় বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2014, 04:12 PM
Updated : 25 Oct 2014, 04:12 PM

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘চীনের সাফল্য: বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র শর্ত নয়। বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে উন্নয়ন দেখা গেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রয়োজন আছে।

“গণতন্ত্র ছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উন্নতি করা যায়। তবে এর অভাবে একটা পর্যায়ে গিয়ে উন্নয়ন থেকে যায়। উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় জনগণের মানবাধিকার নিশ্চিতের জন্য।”

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়’ প্রচলিত এমন ধারণার সঙ্গে দ্বিমত করেন এই অর্থনীতিবিদ। এক্ষেত্রে বিগত দিনে হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে অর্থনীতি সচল থাকাকে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই সাবেক উপদেষ্টাসহ অন্যান্য অতিথিরা চীন ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের তুলনা করে দেশের টেকসই উন্নয়নে নিজেদের পরামর্শ তুলে ধরেন।

আকবর আলি খান বলেন, “চীনে গণতন্ত্র না থাকলেও সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। আর সে কারণে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবতার মুখ দেখেছে। 

“সম্প্রতি চীনের অর্থনীতি অনন্য সাধারণ অগ্রগতি পেয়েছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশ অর্জন করতে পারেনি। গণতন্ত্র না থাকলেও নেতৃত্বের যোগ্যতা, জবাবদিহিতা ও একনিষ্ঠতা চীন উন্নতিতে অনেকক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “শিল্প বিপ্লবের পর ইংল্যান্ডে ৫৭ বছরে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানেই এমন চিত্র দেখা গেছে।”

তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও সুশাসনের সূচকে চীন পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে বলে মনে করে তিনি।

নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জব্বার বলেন, “অর্ধশতাব্দী আগে বাংলাদেশের মতো চীনও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ ছিল। সেখান থেকে তারা এতোদূর এগিয়েছে বাস্তব পরিকল্পনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে।

“চীনে গণতন্ত্র না থাকলেও যৌথ নেতৃত্ব আছে, এককভাবে কেউ দেশ চালান না।”

সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা বলেন, “চীনের অর্থনীতিক অগ্রগতিকে ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রকে অনুৎসাহিত করার কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও চীনের সংস্কৃতি ভিন্ন।”

রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুর্নীতিগ্রস্ত থাকলে গণতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্র কোনোটা দিয়েই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগের আশ্বাস পাওয়া গেলেও ‘স্থিতিশীলতা’র নিশ্চয়তা না পেয়ে উদ্যোক্তরা ফিরে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন গোলাম মর্তুজা।

“জাপান নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ শুরু করলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চতার কারণে বিনিয়োগের বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি। শুধু আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে,” বলেন তিনি।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বাবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে সরকারের বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি।