দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপোড়েনের পর বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিচিত্র নিয়ে মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর পরামর্শ দিয়ে পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গটি আনে বিশ্ব ব্যাংক।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। ‘জরুরি অগ্রাধিকার কাজ’ হিসেবে এতে পদ্মা সেতু রয়েছে।
২০১৩ সালে বিশ্ব ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওয়াশিংটনভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থাটির আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
তিনি তখন বলেছিলেন, বিশ্ব ব্যাংকের কারণে পদ্মা সেতুর কাজ দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
নতুন করে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি- পদ্মা সেতুতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। বিশ্ব ব্যাংক অযথাই আমাদের দুটি বছর নষ্ট করেছে।”
গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেওয়ার পর পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ গুছিয়ে নিতে শুরু করে সরকার। এই বছরের মাঝামাঝিতে সেতুর মুল অবকাঠামো নির্মাণে একটি চীনা কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়।
তবে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে অতীতের সেই ‘তিক্ততা’ ভুলে যেতে চান অর্থমন্ত্রী।
“সেটা ডেড ইস্যু। নিজেদের অর্থে আমরা আমাদের স্বপ্নের সেতুর কাজ শুরু করেছি। আমাদের সরকারের মেয়াদেই এর কাজ শেষ করব।”
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২৯১ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে তখন বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার সম্মতি দিয়ে এগিয়ে এসেছিল।
২০১১ সালে ঘটা করে নদীর বুকে বাংলাদেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পের ঋণচুক্তি সইয়ের পর ওই বছরই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক।
এনিয়ে নানা আলোচনার পর ২০১২ সালের জুনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে সংস্থাটি। এরপর সরকারের দেন-দরবারে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় তারা।
কিন্তু দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে আবার গোল বাঁধলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে তার আগে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে।
মুহিত দাবি করেন, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জেলিকের ‘একগুয়েমির’ কারণেই প্রকল্পটি নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ‘তিক্ততা’ সৃষ্টি হয়েছিল।
“এই লোক বিদায় নেওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমাদের পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা কোনওভাবেই কাম্য ছিল না।”
“এটা যদি তারা আগে বুঝত তাহলে আমাদের পদ্মা সেতুর কাজ এতদিনে অনেকটা এগিয়ে যেত।”
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্থাটির অর্থায়নে ৬৬০ কোটি ডলারের ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে।
মুহিত বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল, তা সরকারও ভুলে যেতে চায়।
“এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমরা এখন বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ চাই। আশা করছি, তারা ইতিবাচক সাড়া দেবে।”
২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা, এর মধ্যে ১৪০ কোটি ডলারই বিশ্ব ব্যাংকের।