মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ১১০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে শনিবার এক আলোচনা সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এই পরামর্শ দেন তিনি।
উন্নয়নের সুবিধাগুলো পল্লীতে পৌঁছে দিয়ে গ্রামে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার পাশাপাশি বাজার সৃষ্টির পরামর্শ দেন এ পি জে কালাম।
এই বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ- মনে করিয়ে দিয়ে তা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সরকার পরিচালনাকারীদের একই আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিবেশী এই দুই দেশের বাজার থেকে প্লাস্টিক সরাতে পারলে গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
গ্রামে বা মফস্বলে জ্ঞানভিত্তিক যোগাযোগ বাড়াতে পরামর্শ দেন তিনি। স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত এবং টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মো. ফরাসউদ্দিন আহমেদ জানতে চেয়েছিলেন- গ্রামীণ জনপদে শহুরে সুবিধা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার কৌশলটি কী হবে?
এর ফলে গ্রাম ছাড়ার প্রবণতা কমবে, যার মধ্য দিয়ে শহরের ওপর বাড়তি চাপ এড়ানোও সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
‘সাসটেইনএবল ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম ফর এ পিসফুল অ্যান্ড প্রসপারাস গ্লোবাল সোসাইটি’ শীর্ষক এই প্রবন্ধে তিনি গ্রামীণ জীবনে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে তার নিজের ধারণা ‘প্রোভাইডিং আরবান এমেনিটিজ টু রুরাল এরিয়া (পিইউআরএ-পুরা)’ কৌশলও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের প্রসার রোধে করণীয় জানতে চান বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছে।
জবাবে কালাম বলেন, “কেন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে মানুষ জড়াচ্ছে, আগে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। সেই কারণটি দূর করা গেলে সন্ত্রাসবাদ কমবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারলে সন্ত্রাসবাদ কমে আসবে।”
৪২ মিনিটের বক্তৃতায় এ পি জে কালাম ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির সম্ভাবনা ও সমস্যা, নেতৃত্ব বিকাশে করণীয়, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ও সম্ভাবনা, সার্ক অঞ্চলের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বিভিন্ন গবেষণা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন তিনি।
এমসিসিআইর আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসে শুক্রবার বাংলাদেশের সাড়ে পাঁচশ’ শিক্ষার্থীর উদ্দেশে রাজধানীর একটি হোটেলে বক্তব্য রাখেন এ পি জে কালাম। একদিন বাদে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বক্তব্য রাখেন শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর উদ্দেশে।
কর্মপরিবেশ উন্নত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি নির্ভর করেকর্মীর উৎপাদনশীলতার ওপর। এজন্য কর্মীর দায়বদ্ধতাও জরুরি। আবার কর্মীর সন্তুষ্টি সৃষ্টি করে তার দায়বদ্ধতা।
“ভালো কর্মপরিবেশ নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার উদ্ভাবনী শক্তির ওপর। আর এসবই নির্ভর করে উদ্ভাবনী বা সৃজনশীল নেতৃত্বের ওপর।”
নেতৃত্ব যিনি দেবেন তার কী গুণাবলী থাকা দরকার, তা-ও বলেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
“যিনি নেতৃত্ব দেবেন তার দূরদৃষ্টি থাকতে হবে। এই দূরদৃষ্টিকে কার্যকর করতে আগ্রহ থাকতে হবে। নতুন ব্যবস্থায় চলার মত মানসিকতা থাকতে হবে। সফলতা ও ব্যর্থতার ব্যবস্থাপনাও জানতে হবে।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
একই সংস্কৃতি এবং একই ঐতিহ্যের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন এ পি জে কালাম।
তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ প্রকৃতিগতভাবে বন্ধু। সুন্দরবন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র যেমন দুই দেশের। তেমনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুলের গান ও সাহিত্য, ত্রিপুরা, মনিপুরী সংস্কৃতির মতো অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো দুই দেশেই সমানভাবে গুরুত্ব পায়।
পাট ও মৎস্য খাতে দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলেও মত দেন এ পি জে কালাম। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রাকৃতিক তন্তু শিল্প স্থাপনে তিনি এমসিসিআইকে কাজ করার পরামর্শও দেন।
বিশাল জনবহুল ও বিশ্বে প্রভাবশালী দেশ ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রতিবেশীর কী করা উচিত- এই প্রশ্ন করেন বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ বারী।
উত্তরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, “জনসংখ্যা কোনও বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, কার কত সম্পদ আছে। সেটা হতে পারে মেধা সম্পদও। তাতেই আপনি এগিয়ে যাবেন।”
১৪৭ কোটি মানুষের বাস দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করেন এ পি জে কালাম।
“সার্ক বিশ্বের ২৫ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধি। এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য রয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তরুণ এখানে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে এ অঞ্চলের মানুষের সক্ষমতাও সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের যে কোনও অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”