গ্যাসের দাম বাড়াতে ঈদের পর গণশুনানি

সব ধরনের গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এগুচ্ছে পেট্রোবাংলা, যাতে ৫ থেকে ১২২ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2014, 03:24 PM
Updated : 30 Sept 2014, 03:29 PM

জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলায় পাঠানো হয়েছে।

ঈদের পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে পাঠানো হবে এবং বিইআরসি গণশুনানির পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর।

ঈদের কত দিন পর প্রস্তাবটি বিইআরসিতে পাঠানো হবে, তা স্পষ্ট করেননি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান। ঈদের ছুটি শেষ হচ্ছে আগামী ৮ অক্টোবর।

হোসেন মনসুর মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, গ্যাসের মূল্য কী হবে বা মূল্য সংযোজন করতে হবে কি না। মন্ত্রণালয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দিয়েছে।”

মন্ত্রণালয় থেকে পেট্রোবাংলায় কাছে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে গৃহস্থালির কাজে পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের।

দুই চুলার গ্যাসের বিল মাসিক ৪৫০ টাকা থেকে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক চুলার সংযোগে ৪০০ টাকা থেকে ১১২ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৫০ টাকার প্রস্তাব এসেছে।  

বাসাবাড়িতে মিটার সংযোগে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে হোসেন মনসুর বলেন, “অন্যান্য দেশে গ্যাসের যে মূল্য সে তুলনায় আমাদের কম। দাম কম হওয়ায় বিতরণ কোম্পানিগুলিও মার খাচ্ছে। তাই মূল্যবৃদ্ধি করতে হবে।”

বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে তার যুক্তি, “পাইপলাইনের মাধ্যমে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার করে মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা। কিন্তু গ্রামের মানুষ সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করছেন পাইপলাইনের থেকে চার গুণ দাম দিয়ে। তাই মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে।

“ধরুন, গ্যাসের প্রকৃত মূল্য আট টাকা। আমরা যদি এক টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা করি, তাহলে প্রকৃত মূল্য হল না। কত বাড়ছে সেটা ব্যাপার না, আমরা প্রকৃত মূল্যে যেতে চাইছি।”

বাসা-বাড়ির বাইরে সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুতের (শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্র) গ্যাসে। এ খাতে ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি হাজার ঘনফুট ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতি এক হাজার ঘনফুট সিএনজির দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা, শিল্পের গ্যাস ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ২২০ টাকা, বানিজ্যিক গ্যাস ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, সার উৎপাদনের গ্যাস ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যাস ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ টাকা এবং চা-বাগানে সরবরাহ করা প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ অগাস্ট আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গ্যাসের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন সিএনজি ও ইটভাটা ছাড়া সব ধরনের গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়।

গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নতুন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন।

নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, “অনেকদিন দাম বাড়ানো হয়নি; এজন্য হয়তো সরকার সামঞ্জস্য করতে চাচ্ছে।”

“তবে ধাপে ধাপে বাড়ালে ভালো হত। একবারে দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আসবে।”

জায়েদ বখত মনে করেন, যেহেতু মূল্যস্ফীতি এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, সেই কারণেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে নিতে চাচ্ছে।