৬.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির

সরকার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা করলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাবে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2014, 09:10 AM
Updated : 25 Sept 2014, 01:41 PM

তবে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেই মনে করছে ম্যানিলা ভিত্তিক এই ঋণদাতা সংস্থাটি।

এডিবির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৪’ এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ‘অর্থনীতির ভিত্তি বেশ মজবুত’ হওয়ায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হতে পারে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানিসহ বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা খুবই ইতিবাচক।”

অবশ্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন।

“রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে সেটা অবশ্যই সম্ভব।”

গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) আগের বছরের চেয়ে বিনিয়োগ বেড়েছে বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।

“শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় আমদানি বেড়েছে। এটা ইতিবাচক।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) হবে বলে এডিবি মনে করছে। আর গড় মূল্যস্ফীতি গতবারের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।

বিশ্ববাজারে খাদ্যমূল্য এবং জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকায় বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি সহনীয় থাকবে। পাশাপাশি বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ‘বেশ’ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ১২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি  পেয়েছে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নীতি সহায়তার কারণে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শথাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৪ তাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে হতে পারে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

“শিল্প ও কৃষি খাতের ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ার পাশপাশি দেশের বাজারেও চাহিদা বাড়বে।”

এবার রপ্তানি আয় গতবারের চেয়ে ১৩ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়ে এডিবি বলেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে রপ্তানি আয়ে ‘বেশ ভালো’ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সে ধারা অব্যাহত থাকবে।

“তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং কারখানায় নিরাপত্তা বিষয়ে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরে আসছে। রপ্তানি বাড়াতে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

২০১৩-১৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছিল ১২ শতাংশ।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে এবার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।

প্রতিদেনে বলা হয়, গত অর্থবছর রেমিটেন্স ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছিল। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিটেন্স প্রবাহে নিম্নমুখি ধারা ছিল। তবে শেষ ছয় মাসে তা বেশ বেড়েছে।

গত অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের ধারা চলতি অর্থবছরে অব্যাহত থাকতে পারে বলেই এডিবির অর্থনীতিবিদদের ধারণা।

“কম খরচে বিদেশে লোক পাঠানোর ইতিবাচ প্রভাব চলতি অর্থবছরের রেমিটেন্স প্রবাহে পড়বে।”

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে কয়েকটি ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় না হলে এবং বিদেশি সাহায্য না এলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এডিবি।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও এই প্রতিবেদনে ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি কাজুহিকো হিগুচি ।