সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান

সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকজন প্রবীণ অধ্যাপক, সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2014, 12:41 PM
Updated : 19 Sept 2014, 12:42 PM

শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এ আহ্বান জানান।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে তরুণ সমাজকে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দেন  তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “এতোকাল ধরে কী করলাম? পঞ্চাশের দশক থেকে আমরা অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়পরায়ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার কথা বলে আসছি। আজকে চারদিকে তাকিয়ে দেখে মনে হয় এর সব পূরণ হয়নি।”

“সংখ্যালঘুদের ধর্মস্থান, বাড়ি-ঘর আক্রান্ত হচ্ছে। মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকেই নিরাপদ বোধ করছে না। এই পরিণতি আমরা আশা করিনি। এই অবস্থার বদল না হলে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”

পদ্মশ্রীতে ভূষিত এই শিক্ষাবিদ বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ আলাদা হলেও রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সকলের লক্ষ্য। কিন্তু জাতীয় অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই। কিন্তু এই মৌলিক বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকতে হবে। এই অবস্থায় তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণ সমাজের কাছে আমার আহ্বান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে আপনারা এগিয়ে আসুন।”

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, “সমাজে একটা দুঃসময় চলছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বেড়েছে। এর ফলে রাজনীতি ও ধর্ম দুটোই কলুষিত হচ্ছে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সকল ধর্মের সম অধিকারের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধারপরাধ মামলার রায়ের পর দেশের যেসব জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে জনপ্রতিনিধিরা সেখানে যায়নি। এমনকি প্রতিবেশীরাও আসেনি। আবার উপজেলার নির্বাচনে ওই সব এলাকায় সাম্প্রদায়িক শক্তি জিতেছে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “আমরা নৃতাত্ত্বিক ও সাম্প্রদায়িক বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশ চাই। কিন্তু মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রে তা হারাতে বসেছে। অনেক সংখ্যালঘু দেশত্যাগ করতে চাচ্ছে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এগুলো প্রতিহত করতে হবে।”

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহসভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “দুঃশাসন, সাম্প্রদায়িকতার সাথে আঁতাত করে চলছে রাজনৈতিক দলগুলো। আমলা, ভূমিদস্যু, ব্যাংক ডাকাতরা এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। কোনমতে নাক উঁচু করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে। রাজনীতিতে সামাজিক আন্দোলন, তারুণ্য ও প্রান্তিক জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শচীন কর্মকার বলেন, “মৌলবাদ সুকৌশলে সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে। এটা রুখতে হবে। এজন্য তরুণরাই প্রধান সৈনিক।”

নারী নেত্রী ফৌজিয়া মুসলিম বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ধর্মীয় উস্কানির মধ্য দিয়ে তরুণদের বিপৎগামী করা হচ্ছে। এটা পুরো মানব সভ্যতার জন্যও চ্যালেঞ্জ।”

এই অবস্থা থেকে সমাজকে বের করে আনতে সামাজিক আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায় বলেন, “সমাজে সাম্প্রদায়িকতা, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের ছোবল এসেছে। এখনই এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা না গেলে বিপদ হবে। আগামী দিনের সংগ্রাম সবাইকে একসাথে করতে হবে। তার নেতৃত্বে থাকতে হবে তরুণ সমাজকে।” 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হান্নানা বেগম, জনসংহতি সমিতির প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোবারক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।