হয়রানি থেকে মুক্তি চান অনাবাসী সিআইপিরা

নিজেদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন ‘বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তির (সিআইপি-এনআরবি) খেতাব পাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2014, 12:00 PM
Updated : 18 Sept 2014, 12:00 PM

বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স পাঠানো ১০ প্রবাসী এবং বাংলাদেশি পণ্য আমদানিকারক একজনকে এই অনাবাসী সিআইপি কার্ড দেয়।

বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর ক্যাটাগরিতে এই মর্যাদা পেয়েছেন- সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান, আবুল কালাম, মুহাম্মদ আবুল কালাম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ আলী তালুকদার, মোহাম্মদ আদনান ইমাম, কাতার প্রবাসী মোহাম্মদ সামসুল আলম, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া, আব্দুল আজিজ খান, ওমান প্রবাসী আবুল কালাম আজাদ ও কাজী সফিকুল ইসলাম।

আর বাংলাদেশি পণ্য আমদানিকারক হিসেবে অনাবাসী সিআইপি কার্ড পেয়েছেন রাশিয়া প্রবাসী ফিরোজ উল আলম।

রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে ‘সিআইপিরা’ দেশে অর্থ পাঠাতে নানা হয়রানির শিকার হওয়া কথা তুলে ধরেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর পরও বিভিন্ন দপ্তর থেকে জানতে চাওয়া হয় এই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করেছি বা করব। এটা এক ধরনের হয়রানি। যেখানে বিনিয়োগ করা হচ্ছে সেখানেও নিরাপত্তা নেই।

তার প্রশ্ন, “এ রকম হলে প্রবাসীরা কেন দেশে টাকা পাঠাবে?”

যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোহাম্মদ আলী তালুকদার বলেন, “আমরা চাই সরকার আমাদের নিরাপত্তায় বিশেষ মনোযোগী হবে।”

দেশে আসার পর নানা হয়রানির মুখে পড়ার কথা জানান আদনান ইমাম, ওমান প্রবাসী আবুল কালাম আজাদ ও কাতার প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ভূইয়া।

রফিকুল বলেন, “দেশে আসার পর কর কর্মকর্তা আর পুলিশ পেছনে লেগে থাকে। এক সপ্তাহের জন্য এলে তাদেরকেই সময় দিতে হয়, পরিবারের লোকজনদের সময় দিতে পারি না। এ অবস্থার অবসান চাই।”

কাতারপ্রবাসী আব্দুল আজিজ খান বলেন, “অনেকে আমাদের চেয়ে বেশি টাকা পাঠালেও পুলিশের হয়রানির কারণে সিআইপি কার্ড পাওয়ার আবেদন করে না। আমার বাড়িতে রাতে পুলিশ গেছে। কেন গেছে তা তারা বলতে পারে না। এগুলো নিছক হয়রানি।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সিআইপির সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি আগামী বছর থেকে এটা দ্বিগুণ বা তিনগুণ করা হবে। অথবা ২৫ জনকে দেয়া হতে পারে।”

প্রবাসীদের ‘দেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি’ অভিহিত করে মন্ত্রী বলেন, “সরকার জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে ট্রেইনিং সেন্টার করা হচ্ছে। আশা করছি আগামীতে প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ লাখ লোক বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।”

বিদেশে বাংলাদেশিদের নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া রোধে প্রবাসীদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রনালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন। 

সিআইপি কার্ডধারীরা এক বছর মেয়াদে সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। সচিবালয়ের প্রবেশপত্র, বিমানসহ সব ধরনের যানবাহনে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে, বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার ও বিশেষ হ্যান্ডলিং সুবিধা এবং সরকারি হাসপাতালে কেবিন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পান।

এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি এবং বিশেষ জাতীয় দিবসগুলোতে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণ পান সিআইপিরা।

এছাড়া অনাবাসী সিআইপিরা দেশে বিনিয়োগ করলে তাদের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মতেই সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।  

মেয়াদ শেষ হওয়ার সাত দিনের মধ্যে এসব কার্ড সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়ার নিয়ম।

২০১৩ সালে সিআইপি-এনআরবি মনোনয়নের জন্য ৫৫ জন আবেদন করেছিলেন।