আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর অনীহা

দেশের ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত অর্থ জমে থাকায় ব্যাংকগুলো আমানত নিরুৎসাহিত করছে।

শেখ আব্দুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 07:49 AM
Updated : 16 Sept 2014, 07:49 AM

ইতিমধ্যে ব্যাংক খাতে সঞ্চয় স্কিম বন্ধ করার এবং সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ বাড়িয়ে সুদের হার কমানোর ঘটনা ঘটেছে। 

সম্প্রতি রূপালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপকদের চিঠি দিয়ে ব্যাংকের চলমান পাঁচটি সঞ্চয় স্কিম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকও সুদবিহীন আমানত সংগ্রহ করতে শাখা ব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দিয়েছে।

এদিকে পূবালী  ও এনসিসি ব্যাংক ডাবল স্কিমের মেয়াদ সাড়ে পাঁচ বছরে থেকে বাড়িয়ে সাত বছর নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদ হার বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, পুরো ব্যাংকিং খাতে গড় সুদের হার কমেছে।  

সর্বশেষ জুলাই মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদ হার তার আগের মাসের চেয়ে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমেছে।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমানতের সুদ হার কমানো হচ্ছে এটা ঠিক। তবে আমানত স্কিম বন্ধ হচ্ছে এটা আমার জানা নেই। তবে অনেক স্কিমের ধরন পরিবর্তন করা হচ্ছে। যেমন আমাদের ডাবল স্কিমের মেয়াদ আমরা ছয় বছরের পরিবর্তে সাত বছর করেছি।

আমানতের সুদ হার কমার কতগুলো কারণ তুলে ধরেন হেলাল আহমেদ।

“ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। কল মানি মার্কেটে সুদ হার কম। আবার বাজারে স্থানীয় মুদ্রার যে চাহিদা থাকার কথা ছিলো সেটা নেই। এসব প্রেক্ষাপটে ঋণের সুদ হার কমাতে হচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে আমানতের সুদ হারও কমাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত ছিলো ৬ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।  চলতি বছর মার্চ প্রান্তিকে তা ১৬ হাজার কোটি টাকা কমে ৫ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে।

সাধারণত আমানতের পরিমাণে প্রবৃদ্ধি থাকলেও ব্যাংকগুলো আমানত না নেয়ায় এখন তা কমছে। বিনিয়োগ করতে না পেরেই ব্যাংকগুলো আমানতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।   

ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের ঘাটতি ও বিদেশি উৎস থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়ার সুযোগ বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য জমছে।

তারা বলছেন, এমনিতেই বিনিয়োগের চাহিদা কম। তার ওপর চাহিদার তার একটি অংশ পূরণ হচ্ছে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় বাজার থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় কমেছে। এর অন্যতম কারণ উচ্চ সুদ হার। এখন বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যাংকগুলোর ওপর।”

তিনি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ হার কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।

এবারই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বিদেশি ঋণ যোগ করে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

২০১১ সালে দেশের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে ৮২ কোটি ডলার, ২০১২ সালে ১৫০ কোটি ডলার এবং ২০১৩ সালে ১৮২ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ এসেছে বিদেশ থেকে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত এবিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগের পরিবেশ সহায়ক নয়, আবার অনেক উদ্যোক্তা বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।

“ফলে অনেক তারল্য থাকলেও স্থানীয় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদ হার কমাতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার কমাচ্ছে।”