কর আদায়ে হয়রানি কমাতে হবে: মুহিত

কর আদায়ের প্রক্রিয়ায় হয়রানি দূর করে এটাকে সহজ ও গ্রাহকবান্ধব করার ওপর জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2014, 01:55 PM
Updated : 15 Sept 2014, 06:43 PM

সোমবার আয়কর দিবসে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানান মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “কর আদায়ে হয়রানি, কর প্রদানে ভীতি আমাদের দেশে আছে। যদিও আমাদের নীতি হচ্ছে হয়রানি, ভীতি কমানো।

“আমরা চেষ্টা করছি যারা কর দেবেন তারা যেন মনে করতে পারেন আমরা দেশের জন্য কিছু করছি এমন বোধ জাগ্রত করা। আমরা কিছুটা সুফলও পাচ্ছি। অনেক কর আদায় হচ্ছে। এটা কর ব্যবস্থার প্রগতির লক্ষণ। এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও বাড়ছে।”

সোনারগাঁও হোটেলে সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘমেয়াদী করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ।

মুহিত বলেন, “আয়কর আইন খুব ভালো আইন। এই আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এখন আয়করই হবে রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। শুল্ক ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। এখন থাকবে আয়কর ও মূসক। এর সাথে হয়ত ‘ইউজার ট্যাক্স’ যোগ হতে পারে।

“১৯৮৩ থেকে ২০০৯ সালের শুরু পর‌্যন্ত কর আদায় বেড়েছে জাতীয় আয়ের মাত্র তিন শতাংশ। গত পাঁচ বছরে বেড়েছে তিন শতাংশ। আমাদের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে কর আদায় জাতীয় আয়ের ৪ থেকে ৫ শতাংশ বাড়বে।”

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “প্রত্যক্ষ কর দেশের সক্ষমতার লক্ষণ। আমাদের ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে, কর দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। নিজেরা কর দিতে হবে, অন্যদেরও উৎসাহিত করতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনতে হলে কর খাতেও প্রবৃদ্ধি আনতে হবে।

তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীরা কর দিতে চাই। সেজন্য পরিবেশ দরকার। ব্যবসায়ীরা কর অফিসে যেতে চায় না ভয়ে। তারা মনে করে একবার ধরা দিলে পরের বার আয় না হলেও কর দিতে হবে।

“এজন্য এনবিআরকে সেবামূলক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। কর্মকর্তাদের মনোভাব হতে হবে সহযেগিতার, যাতে ব্যবসায়ীরা ভয় না পায়।”

করদাতাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, যিনি ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা খাতে সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “কর কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায়ে না গিয়ে যারা কর দিচ্ছে শুধু তাদের কাছ থেকেই আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এনবিআরের কাঠামোতে পরিবর্তন এনে জনবল বাড়িয়ে দেশের সব এলাকা থেকে কর আদায় বাড়াতে হবে। সেবার মান আরো গ্রাহকবান্ধব করতে হবে।”

সম্মাননা দেয়ার ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান, সাধারণ করদাতা ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আলাদা করার প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি করদাতারা যাতে বিনোদনমুলক পরিবেশে কর দিতে পারেন। সেজন্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।”

এনবিআরের সদস্য (প্রশাসন) বশির উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত করদাতারা, ব্যবসায়ী ও এনবিআরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

২০০৮ সাল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরকে আয়কর দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এনবিআর।

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত আয় কর। চলতি অর্থবছরে আয়কর থেকে ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার।

বিদায়ী অর্থবছরে আয়কর থেকে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এবারের মেলা থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর।

অনুষ্ঠানে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ করবর্ষে সেরা করদাতা হওয়ায় ২০ জন ব্যক্তি ও ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড এবং ৪৩ জন ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময়  ও সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়েছে।

এই ৪৩ জন ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিসন্দা।

২০১৩-১৪ ও ২০১২-১৩ করবর্ষে প্রতিষ্ঠান হিসেবে শীর্ষ করদাতা হয়েছে শেভরন বাংলাদেশ। এ দুই করবর্ষের জন্য সম্মাননা পাচ্ছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক এনএ।

এর বাইরে ২০১৩-১৪ করবর্ষে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং ২০১২-১৩ করবর্ষে তাল্লো বাংলাদেশ লিমিটেড এ সম্মাননা পেয়েছে।

অন্যদিকে, সারা দেশে জেলা পর্যায়ে তিনজন শীর্ষ করদাতা ও দীর্ঘ সময় ধরে কর দিচ্ছেন এমন ৩৬২ জন করদাতাকে এ সম্মাননা বা কর কার্ড দেওয়া হচ্ছে।