চাহিদার অর্ধেক গরুই আসে ভারত থেকে

প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩৫ লাখ গরু জবাই হয়, যার মধ্যে ২০ লাখই ভারত থেকে আসে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2014, 01:44 PM
Updated : 14 Sept 2014, 01:44 PM

কোরবানির ঈদের আগে জনগণকে সচেতন করতে রোববার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গরু মোটাতাজাকরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চোরাই পথে আসা এসব ভারতীয় গরুর মাধ্যমে দেশে গবাদী পশুর খুরা রোগও আসে। আর কোরবানি সামনে রেখে অনেক ব্যবসায়ী গরু ‘মোটা-তাজা’ করতে স্টেরয়েড ব্যবহার করেন, যার ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের দেহেও ছড়াতে পরে।

কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এবিএম শহিদ উল্লাহ বলেন, “গরুকে মোটা তাজা করতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্টেরয়েড ব্যবহার করছেন। এতে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পশুটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়।”

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে বি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, পশুর শরীরে থাকা স্টেরয়েড রান্নার পরও কার্যকারিতা হারায় না। ফলে মানুষের কিডনি ও লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগেই বিভিন্ন পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন জানিয়ে শহিদ উল্লাহ বলেন, “সেখানে ২৪ ঘণ্টা পশু চিকিৎসক থাকবেন। কেউ অসাধু তৎপরতা চালালে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেব।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের আগে ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসার বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’।

“ভারত থেকে আসা গরুগুলোর বয়স বেশি, মাংসও স্বাদের না। তারা খুরা রোগ নিয়ে আসে, ফলে এদেশে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের খুর ও মুখে ঘা তৈরি হয়। এ রোগ যাতে দেশে অন্য গরুতে না ছড়ায়, সেজন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সীমান্ত এলাকায় দেশি গরুকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করে।”

বাংলাদেশে গরুর চাহিদা ও জবাইয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দেশীয় বাথানগুলো গরুর চাহিদার ৫০ শতাংশও পূরণ করতে পারে না বলে ভারত থেকে গরু আনতে হয়। চাহিদার এই সুযোগ নিয়েই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের জন্য অপরিকল্পিত উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে চায়।”

তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ গরু জবাই হয়, যার মধ্যে ঈদেই জবাই হয় ১৮ লাখ। দেশি গরুতে চাহিদা মেটে না বলে প্রতি বছর ভারত থেকে আসে ২০ লাখ গরু।

বিদেশি গরু বা রোগাক্রান্ত গরু চেনার উপায়ও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যেসব গরুর গতিবিধি স্বাভাবিক, শরীরের মাংস ফাঁপা নয়, নাড়াচাড়া ও চলাফেরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারে সেই গরুগুলোই আসলে সুস্থ স্বাভাবিক গরু। ওষুধ খাইয়ে মোটা করার চেষ্টা করা হলে তার গতিবিধি স্বাভাবিক থাকে না।” 

গরু পালনে নিয়মিত চিকিৎসা দেয়া, টিকা দেয়া, পরিমিত ও পরিকল্পিতভাবে খাবার দেয়ার কথাও বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল বেগ ও সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসাইন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।