সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য জানান।
আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশে সোয়া এক কোটি মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ১৫ কোটির বেশি মানুষের জন্য এটা গুড এনাফ।
“আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাড়ার বড় একটি পর্যায় শুরু করেছিলেন এএসএইচকে সাদেক।”
মুহিত বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি চুরির জায়গা ছিল। শিক্ষকদের নামে বেতন তোলা হতো। কিন্তু শিক্ষকরা সেই বেতন পেতেন না। কর্তাব্যক্তিরা সেটা নিয়ে যেতেন।
“এএসএইচকে সাদেক এটা বন্ধ করেন। এখন বিষয়টাকে খুবই সাধারণ ও সহজ মনে হচ্ছে। কিন্তু তিনি যখন করেছেন, তখন সেটা সহজ ও সাধারণ ছিল না। তিনি বললেন, বেতন নিতে হলে সকল শিক্ষককে একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
“মানুষের ব্যাপক আকারে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়ার সাদেকের পথযাত্রা আমরা এগিয়ে নিয়ে গেছি। গত সরকারের আমলে আমরা ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিয়েছি।”
মুক্তিযুদ্ধকালে তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা সাদেকের ভূমিকা তুলে ধরে মুহিত বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের বাসায় আশ্রয় দেয়ার কঠিন কাজও সে করেছে। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ঢাকায় ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করা তাদের জন্য কঠিন ছিল।
“মুক্তিযোদ্ধা হওয়া আমার জন্য সহজ ছিল, কারণ আমি বিদেশে ছিলাম। যারা সীমান্তবর্তী এলাকায় ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হওয়া তাদের জন্যও সহজ ছিল।”
পরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাদেকের বাসায় দুই বার রেইডও হয়েছিল। তবে মুক্তিযোদ্ধারা দুইবারই আগেভাগেই সরে পড়তে পেরেছিল।”
বন্ধু সাদেকের সঙ্গে পরিচয় পর্বের স্মৃতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “১৯৫৬ সালে চাকরিতে যোগ দিয়ে লাহোরে যাওয়ার পর আমাদের পরিচয় হয়। সেবার একত্রে চাকরিতে যোগ দেয়া সবাই পূর্বপরিচিত থাকলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সে। এরপর সে আমার আত্মীয় হয়ে যায়।”
এএসএইচকে সাদেকের মূল্যায়নে তিনি বলেন, “তিনি কঠোর ও কাঠখোট্টা ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। আইনের ব্যত্যয় তিনি সহ্য করতে পারতেন না। জনসেবা করতে গেলে অনেক সময় আইন পূর্ণরূপে মানা সম্ভব হয় না। এটিকে ব্যবহার করেই দুর্নীতি হয়। দক্ষতা হচ্ছে, এটাকে মিনিমাম পর্যায়ে রেখে কাজ করা। আর সাদেক সেটা করতে পারতেন।”
খুলনা বিভাগীয় সমিতি আয়োজিত এই আলোচনায় উন্নয়নের দিক দিয়ে খুলনা অঞ্চল অবহেলিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আঞ্চলিক নেতারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এর জবাবে মশিউর রহমান বলেন, “খুলনা অঞ্চল অবহেলিত ঠিক আছে। কিন্তু এই অবহেলা থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মংলা বন্দরকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ২৬ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
“খুলনা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুলনা নগর উন্নয়নের জন্য চার থেকে পাঁচশ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। মংলা বন্দর ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাংসদ মনিরুল ইসলাম, সাংসদ আব্দুর রউফ, জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, খুলনা বিভাগীয় সমিতির সভাপতি এমএ কুদ্দুস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাবেক সিএসপি অফিসার এএসএইচকে সাদেক ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৮ সালে অবসরে যান। ১৯৯২ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি যশোরের কেশবপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী হন।
২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন।