রেমিটেন্স কমেছে অগাস্টে

রপ্তানির পর হোঁচট খেল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। তবে রেকর্ড গড়ার পরের মাসে কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 06:06 PM
Updated : 3 Sept 2014, 06:38 AM

গত কিছু সময় ধরে রেমিটেন্স গতিশীল হলেও চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস অগাস্টে আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ২২ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, রোজার ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠানোয় জুলাই মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে এসেছিল। সেই কারণেই দুই মাসে রেমিটেন্সের এই ব্যবধান। এটা ‘অস্বাভাবিক’ কিছু না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য শেষ হওয়া অগাস্ট মাসে ১১৬ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অঙ্ক জুলাই মাসের চেয়ে ২২ শতাংশ কম, জুলাইয়ে আসে রেকর্ড ১৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স।

তবে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে বিদায়ী অগাস্টের রেমিটেন্স ১৩ শতাংশ বেশি। ২০১৩ সালের অগাস্টে ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্সে এসেছিল।

গত সাত মাসের রেমিটেন্সের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি মাসেই ১২০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজার ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে প্রায় দেড় বিলিয়ন (১৫০ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি রেমিটেন্স আগে কখনোই আসেনি।

“এ হিসাবে জুলাই মাসের চেয়ে অগাস্টে রেমিটেন্স বেশ খানিকটা কম এসেছে। তবে অন্যান্য মাসের সঙ্গে তুলনা করলে কম হবে না।”

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জুলাই মাসের মতো সেপ্টেম্বর মাসেও বেশি রেমিটেন্স আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন ছাইদুর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর‌্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট)২৬৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে ২২৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছ্লি।

গত বছরের জুলাই ও অগাস্ট মাসে রেমিটেন্স এসেছিল যথাক্রমে ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং ১০০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের (২০১২-১৩) চেয়ে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।

২০১৪ সালের প্রথম আট এক হাজার  মাসে (জানুয়ারি-অগাস্ট) রেমিটেন্স এসেছে ১০১০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

২০১৩ সালের জানুয়ারি-অগাস্ট সময়ে ৯৩০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।

গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এর খাতে আয় কমেছে দেড় শতাংশ।

রিজার্ভ ২২.১৩ বিলিয়ন ডলার

রেমিটন্স প্রবাহ কমলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২২ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই অবস্থান করছে।

মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে ছাইদুর রহমান জানান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৭ অগাস্ট প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। এরপর থেকে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করছে।

এর আগে চলতি বছরের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

ছাইদুর রহমান বলেন, “আমদানি বাড়ার পরও মূলত রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ বেড়েছে।”

এছাড়া বিদেশী সাহায্য (ফরেন এইড) এবং বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বৃদ্ধি রিজার্ভ বাড়ায় অবদান রেখেছে বলে জানান তিনি।

২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

এবার আকুর বিল ৯২ কোটি ডলার

চলতি সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করা হবে। এবার ৯২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের আমদানি বিল শোধ করা হবে।

আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসবে বলে জানান ছাইদুর রহমান।

প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ।

মে-জুন মেয়াদের ৯৭ কোটি ডলার জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে তা ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে

গত দুই সপ্তাহ বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে কোন ডলার কেনেনি। বিক্রেতা তা থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে না বলে জানান ছাইদুর রহমান।

এর আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাজার থেকে ডলার কিনছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে ছাইদুর রহমান বলেন, “আমদানি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর এলসি খুলতে বেশি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। সে কারণে তারা ডলার বিক্রি না করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত (১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট) ৩০ কোটি ডলারের মতো কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫১৫ কোটি ডলার কেনা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরের কেনা হয়েছিল ৪৭৯ কোটি ডলার। 

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতেই বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।

মঙ্গলবার আন্ত:ব্যাংক মুদ্রা বাজারে ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৭৭ টাকা ৪০ পয়সা।