গ্রামীণ ব্যাংক পর্ষদ নির্বাচনে বিধি সংশোধন হবে: মন্ত্রী

বাংলাদেশ ব্যাংক অপারগতা প্রকাশ করায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের জন্য বিধিমালা সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2014, 12:03 PM
Updated : 6 July 2015, 05:40 PM

তিনি বলেছেন, বিধিমালার যে অংশে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয়া হয়েছে, সেখানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলে অন্য কিছু’ লিখতে হবে।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জুনের সঙ্গে এক বৈঠকের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একটি ব্যবস্থা করব। করব যখন তখন জানবেন। সামথিং একটা করা যাবে, ওয়ার্কিং অন ইট। দুই-এক দিনের মধ্যেই ইট উইল বি ফাইনালাইজড।”

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনে গত ৬ এপ্রিল এই বিধিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

বিধিমালায় পরিচালক নির্বাচনের জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়, যা আগামী ৫ অক্টোবর শেষ হচ্ছে।

কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রামীণ বা অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহের কথা গতমাসে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয় বলে গণমাধ্যমের খবর।

বিষয়টি স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়, তারা গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাচন করতে পারবে না। তারা বলেছে, তারা রেগুলেটর বডি। রেগুলেটর বডি হিসাবে তাদের তা করা ঠিকও নয়।”

বিধিমালা করার আগে এ বিষয়টি কেন দেখা হয়নি বা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত নেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “হয়ত তারা দেখেননি, তাই ভুল হয়েছে। বোধহয় তাদের মতামত নেয়া হয়নি, কি হয়েছে তাতে?” 

গ্রামীণ ব্যাংক ভবন

১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হয়। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।

এরপর ২০১০ এর ডিসেম্বরে নরওয়ের টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া বিদেশি অর্থ এক তহবিল থেকে অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

এই প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায়  একটি কমিশন গঠন করে সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা; সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আইনি কাঠামো এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয় এই কমিশনকে।

এছাড়া অবসরের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও পদে থাকার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালের ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে ইউনূস উচ্চ আদালতে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণ ব্যাংক কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরিচালক নির্বাচনসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।

এতেদিন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকের সংখ্যা ছিল ১২ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে মনোনয়ন দিত সরকার। বাকি নয় পরিচালক নির্বাচিত হতেন ঋণগ্রহিতা নারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে। শেয়ারধারী এই পরিচালকদের মেয়াদ ছিল তিন বছর।

ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়ার পর গত তিন বছরে গ্রামীণ ব্যাংকে এমডিও নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ শাহজাহান।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হকও গতবছর অক্টোবরে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র দেন। নতুন চেয়ারম্যান না পাওয়ায় সরকার তাকেই দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “চেয়ারম্যান নিয়োগে আমার বিষয় আমি দেখব।”