‘ব্লু ইকোনমি খুলে দিতে পারে নতুন দিগন্ত’

বাংলাদেশের উন্নয়নে সমুদ্র অর্থনীতির (ব্ল ইকোনমি) বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমুদ্রসম্পদকে উন্নয়নের নিয়ামক হিসাবে ব্যবহার সম্ভব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2014, 06:21 AM
Updated : 1 Sept 2014, 10:46 AM

এক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা, উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রযুক্তি ঘাটতির কথাও স্বীকার করেন তিনি।

সোমবার সকালে রাজধানীতে সোনারগাঁও হোটেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “ভূ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আমাদের সামনে খুলে দিতে পারে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।

“বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি নিরাপত্তায় সমুদ্রের খনিজ সম্পদের ব্যবহার, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরকে আমরা উন্নয়নের নিয়ামক ভূমিকা হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।”

সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারে প্রযুক্তি ঘাটতির কথা স্বীকার করে সরকার প্রধান বলেন, সমুদ্র সম্পদের প্রাপ্যতা, উত্তোলন এবং ব্যবহার সম্পর্কে বাংলাদেশের পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল এবং প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।

তবে দক্ষ জনবল তৈরিতে ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাদান চালুর বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোর সহায়তায় এসকল ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়েও বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ওই দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার পেয়েছে।  

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সীমানাকে বড় ‘বাধা হিসাবে’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ বিষয়টি সবার জানা থাকলেও বিগত ৪০ বছর এ সমস্যা সমাধানে কেউ কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

“ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর আপত্তির মুখে কেবল সমুদ্রসম্পদ আহরণের প্রক্রিয়াই বাধাগ্রস্ত হয়নি, দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে দেশ সমুদ্রকে যত বেশি ব্যবহার করতে পেরেছে, সে দেশ তার অর্থনীতিকে তত এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।”

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরি ‘সমুদ্র-নির্ভর’ বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

“বার্ষিক ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে সমুদ্র পরিবহনের মাধ্যমে।”

বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান নানা প্রজাতির মৎস্য ও অন্যান্য জৈবসম্পদ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিনস এবং কুয়াকাটায় পর্যটন শিল্পকে আরো বিকশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবনযাত্রা মাছ চাষ ও বাণিজ্যিক পরিবহণের মতো সমুদ্র অর্থনীতির কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল।   

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. সায়েদুল হক, বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক আর্নি ম্যাথিসেন বক্তব্য রাখেন।

স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।