বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, “দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে, অধিকার সমুন্নত রেখে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে আমাদের মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করতে হবে।”
আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি মাথায় রেখে পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের জন্যও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এলডিসি (স্বপ্লোন্নত দেশ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে, কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে বেরিয়ে যেতে চাই না। আবার, আমরা অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলতেও চাই না।”
আঞ্চলিক ও বিশ্ববাণিজ্য সম্প্রসারণে অশুল্ককে বাধা বড় সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করে তা অপসারণে করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
এই প্রসঙ্গে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “সব দেশই চায়, একটি দেশই নড়তে চায় না। মুক্তবাজারের কথা বলবেন, নিজের দেশে শুল্কমুক্ত প্রবশাধিকার দেবেন না, এই দ্বিমুখী নীতি তো চলে না।”
রপ্তানি বাড়াতে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরো সক্রিয় করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের কাজে থাকলে হবে না, এখন বাণিজ্যই মূল কথা।
আসিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “সৌদি আরব হালাল মাংস কেনে ব্রাজিল থেকে। আমরা এখানে কী করছি?”
সবজি, মাছ ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দেন সরকার প্রধান। সমুদ্র সীমার বিরোধ নিরসনের পর এখন জলজ সম্পদ বিশেষ করে মাছ আহরণের ওপরও জোর দিতে বলেন তিনি।
কুটির শিল্পে প্রণোদণা দেয়ার পাশাপাশি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির তাগিদও দেন তিনি।
ভোজ্য তেলের আমদানি হ্রাস করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাদাম, সরিষার মতো দেশে উৎপাদিত শস্য থেকে তেল উৎপাদনের ওপর জোর দেন।
জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিষ্ঠিত হয়। টিসিবি’র গুদাম ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪৪ হাজার টন, ডিলার সংখ্যা ৩০০৪ জন।
“দৈনন্দিন পণ্যের বাজার ১১ কি ১২ জন ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করে। রোজায় দাম বাড়িয়ে দিয়ে এক্সপ্লয়েট করে, আইন করে হয় না। বাজারে প্রবেশ করতে হবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোগ্যপণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ রোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও বলেন তিনি।
“ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে, সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, ডিসিপ্লিন ফিরিয়ে আনতে হবে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণিজ্য, শিল্প, শ্রম ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“আমাদের একটাই আকাঙ্ক্ষা, আমরা দ্রুত উন্নয়ন করতে চাই,” নিজের সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।