লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ১৫৫ কোটি ডলার

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ১৫৫ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2014, 06:14 AM
Updated : 15 August 2014, 06:26 AM

২০১২-১৩ অর্থবছরে চলতি হিসাব ভারসাম্যে ২৩৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতের মতে, গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’ ফিরে আসায় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত কমে এসেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পেক্ষাপটে উদ্বৃত্ত কমে আসাকে ‘ভারসাম্যে ফেরা’ বলেই মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) এই গবেষণা পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়ায় আমদানি কমে গিয়েছিল। সে কারণে ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বেশি ছিল।

“কিন্তু নির্বাচনের পর ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসায় মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়ায় উদ্বৃত্ত কমছে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।”

২০১৩-১৪ অর্থবছর গত ৩০ জুন শেষ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যালান্স অফ পেমেন্টের (২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন) পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেছে বৃহস্পতিবার।

এতে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ২৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর শেষে তা কমে ১৫৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

২০১১-১২ অর্থবছরে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে কোনো উদ্বৃত্ত ছিল না; বরং ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরেও লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত দিয়ে অর্থবছর শুরু করে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সে ধারাই অব্যাহত ছিল।

জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, চালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তও কমে আসে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) উদ্বৃত্ত ছিল ২০২ কোটি ডলার। জুন শেষে তা ১৫৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নেমে আসে।

জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে বেশ ‘স্বস্তিদায়ক অবস্থাতেই’ ছিল। কিন্তু বছরের শেষ দিকে এসে অবস্থা কিছুটা বদলায়।

তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেড় বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ‘খারাপ’ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাণিজ্য ঘাটতি ৬৮০ কোটি ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিন হাজার ৬৫৭ কোটি ১০ লাখ (৩৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ৯৭৬ কোটি ৫০ লাখ (২৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবে গত অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৮০ কোটি ৬০ লাখ (৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন) ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ঘাটতি।

রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বরাবরই পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি ডলারে।

তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ৪৭১ কোটি ডলারে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।