ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রূপির দর যেখানে কমছে; সেখানে বাড়ছে টাকার মান।
রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স এবং বিদেশী সাহায্য বাড়ায় টাকার মান বাড়ছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ গবেষক জায়েদ বখত।
আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজারেই ডলার-টাকার বিনিময় হার ৭৭ টাকা ৫০ পয়সার নিচে নেমে এসেছে। ব্যাংকগুলো ৭৭ টাকারও কম দরে ডলার কিনছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রাখার পরও পড়ে যাচ্ছে এর দর।
বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমদানি ব্যয় বাড়ার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ মজুদ রয়েছে। এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
“বাংলাদেশের পেক্ষাপটে বিশাল অংকের এই রিজার্ভই টাকাকে শক্তিশালী করছে।”
এ হিসাবে গত তিন মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার দর ২৭ পয়সা বা দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে প্রায় এক বছর এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর।
মে মাসের শেষের দিকে ডলারের দর কমে ৭৭ টাকা ৬৫ পয়সায় নেমে আসে। গত দুই-আড়াই মাসে তা আরও কমে ৭৭ টাকা ৪৮ পয়সায় নেমে এসেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৭৬ টাকা ৯৩ পয়সায় ডলার কিনেছে। বিক্রি করেছে ৭৮ টাকা ১৫ পয়সায়।
এইচএসবিসি ৭৮ টাকা ১০ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে; কিনেছে ৭৬ টাকা টাকা ৭৬ পয়সায়।
অন্য ব্যাংকগুলোও ৭৭ টাকার কম দরে ডলার কিনেছে। তবে বিক্রি করেছে৭৮ টাকার উপরে।
জায়েদ বখত বলেন, “রপ্তানিকারক ও রেমিটারদের (যারা রেমিটেন্স পাঠান) উৎসাহ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্লোটিং মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ধরে রেখেছিল। ডলারের দর যাতে না পড়ে যায় সেজন্য দিনের পর দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে।
“আমদানি ব্যয় বাড়ার পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় এবং বিদেশী সাহায্য বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।”
“বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে কেনার পরও কমছে এর দর। শক্তিশালী হচ্ছে টাকা।”
‘ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতেই বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এন্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতেই ডলার কেনা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ জুলাই পর্যন্ত (১ জুলাই থেকে ৭ অগাস্ট) ২৭ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১২ সালের প্রথম দিকে এই ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
২০০৩ সালে দেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা (ফ্লোটিং) চালু হয়। অর্থ্যাৎ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়।
এর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-টাকার বিনিময় হার ঠিক করে দিত। সে দরেই ডলার লেনদেন হত।
ডলারের দর কমে গেলে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে জায়েদ বখত বলেন, “বেশি কমে গেলে প্রভাব পড়বে। তবে এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ডলারের দর কমার ইতিবাচক দিকও আছে। আমদানি পণ্যের দাম কম পড়ে।”
২০১২ সালের প্রথম দিকে এই ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৮৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
এরপর থেকে তা কমতে কমতে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৮০ টাকার নিচে নেমে আসে।
অন্যদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া শনিবার (৯ অগাস্ট) ৬১ টাকা ৫৫ পয়সায় (রূপি)ডলার কিনেছে।
মে মাস শেষে রূপি:ডলারের বিনিময় হার ছিল ৫৯ টাকা।
এ হিসাবে দুই মাসে ডলারের বিপরীতে রূপির দর কমেছে ৪ শতাংশের মতো।
২০১৩ সালের অগাস্টে রুপির বিপরীতে ডলারের দর বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৬৮ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০১২ সালের মে মাসে ডলার-রুপির গড় বিনিময় হার ছিল ৫৪ টাকা।
বৃহস্পতিবার দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার।
গত ৭ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বাজার থেকে ডলার কেনা রিজার্ভ বাড়ায় ভূমিকা রেখেছে বলে জানান জায়েদ বখত।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।
জুলাই মাসে ১৪৮ কোটি ২৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা একক মাসের হিসাবে অতীতের যে কোন মাসের চেয়ে বেশি।
যদিও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছিল।
গত অর্থবছরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশী সাহায্য দেশে এসেছে। যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানির জিন্য ৩৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে।
যা ২০১২-১৩ অর্থবছরের চেয়ে ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।