টেকসই ব্যবসা নিয়ে বৈশ্বিক শ্বেতপত্র প্রকাশ

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে টেকসই ব্যবসার ধারণার মধ্যে অবশ্যই মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দুর্নীতিকে বিবেচনায় নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম।

রেজাউল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2014, 05:34 PM
Updated : 5 August 2014, 02:13 PM

ফোরাম প্রকাশিত টেকসই ব্যবসার ওপর প্রকাশিত শ্বেতপত্র নিয়ে এক যৌথবিবৃতিতে একথা বলা হয়।

গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত শ্বেতপত্র নিয়ে ‘টেকসই ব্যবসার শ্বেতপত্র: কী এবং কেন’ শিরোনামের বিবৃতিতে বলা হয়, টেকসই ব্যবসার ওপর স্বচ্ছ ধারণা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন সব ব্যবসা মডেল বানাতে সাহায্য করবে, যা সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে এবং পরিবেশ, মানুষ ও অর্থনীতির ওপর ব্যবসার ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।

বিশ্ব এজেন্ডা পরিষদ, যা বিশ্বের প্রায় ১,৫০০ নেতৃত্বস্থানীয় পেশাজীবীদের এক সংঘ, এর ছোট ছোট দলের এক সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল এই শ্বেতপত্র।

শ্বেতপত্রের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভবিষ্যৎ ব্যবসা মডেলগুলোকে প্রভাবিত করা এবং টেকসই ব্যবসা সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা দেয়া।

বিশ্ব এজেন্ডা পরিষদের প্রধান মার্টিনা লারকিন বলেন, “শ্বেতপত্রটি সাতটি বিশ্ব এজেন্ডা পরিষদের এক সমন্বিত প্রয়াস। এখানে টেকসই ব্যবসা ধারণাটির উপর একটি সমন্বিত চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

“বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিষদ ভবিষ্যতে যেসব ব্যবসা মডেল তৈরি করতে যাচ্ছে, তা নির্ধারণে এই শ্বেতপত্র ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্যদের টেকসই ব্যবসার উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যবসায়িক মডেল প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে।”

বিশ্ব এজেন্ডা পরিষদের মানবাধিকার শাখার প্রধান মাইকেল পসনার বলেন, “টেকসই ব্যবসার নানান মাত্রা ও বিষয়টির গুরুত্ব হিসেবে নিয়ে বলা যায়, এ শ্বেতপত্র টেকসই ব্যবসার ওপর একটি সমন্বিত চিত্র দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং ভবিষ্যতে এ খাতে কাজ করার ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেবে।”

শ্বেতপত্রে বলা হয়, যেসব ব্যবসা মানবাধিকার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবে তারা এই বিশ্বায়িত এবং জবাবদিহিমূলক পৃথিবীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে শ্বেতপত্রে বলা হয়, বিশ্বায়নের এই যুগে উৎপাদক এবং সরবরাহকারী উভয়েরই দায়িত্ব রয়েছে নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

শ্বেতপত্রে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, প্রযুক্তির উদ্ভাবনে পুঁজির প্রবাহ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবার বাজার সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়া হয়।

আগামী বছরগুলোতে প্রায় ৩৩০ কোটি লোক বিশ্বের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হবে। এই বর্ধিত জনসংখ্যার ভোগের চাহিদা মেটাতে প্রায় চারটি পৃথিবীর সমান উৎপাদনের দরকার।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, একটি টেকসই ভোগের মডেল প্রয়োজন চাহিদা-জোগানের এই অসমতা দূর করতে।

একই সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ভোক্তাদের ক্রয় ও ভোগের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য শিক্ষিত করার ওপর জোর দেয়া হয় শ্বেতপত্রে।

নারীর ক্ষমতায়নের ব্যাপারে বলা হয় সরকার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নারী যেন কাজ, মজুরি ও নানা ধরনের  সুবিধার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সময় আইনের শাসনের অভাববোধ করে মূলত সরকারের অক্ষমতা বা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণে। শ্বেতপত্রে এ সমস্যা দূর করতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এনজিও, সুশীল সমাজ, সরকারী এজেন্সি ও অন্য কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।