ব্যাংক পর্ষদে সৎ ও পেশাজীবীদের চান গভর্নর

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সৎ, দক্ষ ও পেশাজীবীদের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন গভর্নর আতিউর রহমান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2014, 06:30 PM
Updated : 4 August 2014, 03:59 AM

রোববার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে নবনিযুক্ত সহকারী পরিচালকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, “রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পেশাজীবী, সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দানের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করবে- এমনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যাশা করে। যাতে করে ব্যাংকে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।”

ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাংকিং বিভাগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানকেও একযোগে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির বড় দুটি ঘটনায় পরিচালনা পর্যদের জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গভর্নরের এই মন্তব্য এলো।   

ওই দুটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দুটি ব্যাংকেরই পরিচালনা পর্যদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনিয়ম এবং গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্যদের বিরুদ্ধে।  

সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ব্যাংক পরিচালক নিয়োগ দেয়- এ অভিযোগও বহু পুরনো। ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে ন্যূনতম অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তিদেরও অনেক ক্ষেত্রে পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।  

আর্থিক খাত নিয়ে অর্থনীতিবিদদের নেতিবাচক মন্তব্যের জবাবে গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করার ফলেই কয়েকটি ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয়টি উদঘাটিত হয়েছে। তা না হলে ‘প্রকৃত সমস্যা’ আড়ালেই থেকে যেত।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কেউ কেউ আর্থিক খাত নিয়ে কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে থাকেন। কিন্তু এ কথা মানতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তদারকি জোরদার করার ফলিই কয়েকটি ব্যাংকে ঋণের নামে বড় ধরণের আর্থিক অনিয়ম উদঘাটিত হয়েছে।

“কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়োচিত ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই সকল অনিয়ম বের হয়ে আসছে। তা না করলে প্রকৃত সমস্যা আড়ালেই থেকে যেত। এ অবস্থাকে কেউ কেউ ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা বলে অভিহিত করছেন। কিন্তু আমরা মনে করি প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ হওয়ার কারণে বরং ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।”

গভর্নর বলেন, গত অর্থবছরে নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক রাখা ছিল একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।

“এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োপযোগী মুদ্রানীতি ও ঋণনীতি প্রণয়ন করে এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি-পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে এমন বৈরী পরিস্থিতিতেও অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক ইতিবাচক ধারায় থাকে।”

তারপরও কয়েকটি সূচকে অবনতি ঘটে জানিয়ে গভর্নর বলেন, জুন শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা  লক্ষ্যমাত্রার (৭ শতাংশ) চেয়ে বেশি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।