‘ঋণে অনিয়মে কঠোর ব্যবস্থা’

ব্যাংক ঋণে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গভর্নর আতিউর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 03:09 PM
Updated : 21 July 2014, 03:09 PM

সোমবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্যে বলেন, “ব্যাংকিং খাত জন আস্থা নির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কিছু অনিয়মের ক্ষেত্রে সংশ্লিস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরও গণমাধ্যমে এগুলোর নেতিবাচক দিক নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে।

“অথচ ব্যাংকিং সুপারভিশন জোরদার করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক গত পাঁচ বছরে অনেক ভালো কাজ করলেও সেগুলো নিয়ে তারা তেমন লেখে না। দু একটি অনিয়মের ঘটনা সমস্ত ভালো কাজকে ম্লান করে দিবে তা হতে পারে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় আতিউর বলেন, “তাই আমি আপনাদের সাবধান করে দিতে চাই, এরপর ঋণ শৃঙ্খলায় কোন ব্যত্যয় ঘটলে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না।

“আপনাদের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পদ্ধতি শক্তিশালী করুন। আপনারা ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হোন।”

তিনি বলেন, “গুণমানের ঋণ প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদে পাঠান। পর্ষদ অন্যায় চাপ দিলে তা প্রতিহত করার কৌশল অর্জন করুন। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিন।

“আপনারা অনিয়ম করে বসে থাকবেন, আর বাংলাদেশ ব্যাংক পরে গিয়ে সেটা ধরবে, এমন হলে অনিয়মের পুনরাবৃত্তি রোধ হবে না।”

ওই সভায় একইসাথে শিল্প খাতে ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের। 

এছাড়া ব্যাংকগুলো যাতে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ করতে বলেছেন গভর্নর। তিনি কয়েকটি বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্কও করেছেন।

আতিউর বলেন, “ঋণ হিসাবে সুদ বাড়ানো হলে তা গ্রাহককে জানানো হয় না। আবার ঋণ হিসাবে সুদ কমে গেলে তা গ্রাহকের হিসাবে সমন্বয় করা হয় না। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সুদ হারের চেয়ে বেশি হার আরোপ করা হয়।

“আবার কোনো গ্রাহক ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে পরিশোধ করলে যে সুবিধা (রিবেট) পাবে তা না দিয়ে উল্টো আর্লি সেটেলমেন্ট চার্জ আরোপ করা হয়।  ঋণ পরিশোধের পর বন্ধকী দলিল গ্রাহককে সময়মত ফেরত দেওয়া হয় না।

“কোনো কোনো গ্রাহক মারা গেলে তার জমাকৃত অর্থ উত্তারাধিকারীকে দেওয়ার ক্ষেত্রে অযথা কালক্ষেপন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অপরিচিত ব্যক্তিদের নমিনি বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও ঘটছে।”

“আবার সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ দেয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক আমানতের ওপর সুদ না দিয়ে মাসিক সর্বনিম্ন স্থিতির ওপর সুদ দেয়ায় আমানতকারিরা প্রকৃত সুদ থেকে অনেক কম সুদ পায়।“

এসব ক্ষেত্রে যথাযথ শুদ্ধাচার অনুসরণের পরামর্শ দেন গভর্নর।

বৈঠক শেষে ব্যাংকার্স সভা বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

এসময় ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি’ প্রেসিডেন্ট ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার, ভাইস প্রেসিডেন্ট পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে মেয়াদী ঋণের সুদ হার একটু বেশি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। স্প্রেডও ৫ শতাংশের বেশি। এজন্য শিল্প খাতের ঋণের সুদ হার কমিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”

এর পাশাপাশি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহও বাড়াতে বলা হয়েছে।

সুর চৌধূরী বলেন, “চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ ধরা হয়েছিলো। মে মাস শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশে। আমরা বলেছি এটা ১৭ শতাংশে নিয়ে যেতে। যাতে উৎপাদনশীল খাত গতি পায়।”

রিটকৃত খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে মামলা পরিচালনায় সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে এস কে সুর চৌধুরী বলেন,“অনেক খেলাপি ঋণ আছে যেগুলো গ্রাহকরা রিট করে আদায় বন্ধ রেখেছে, আবার খেলাপি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। এসব ঋণের মামলাগুলো দ্রুত ‘ভ্যাকেট’ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

সুর চৌধুরী জানান, ১৫টি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ছিল। তাদেরকে সময় দেওয়া হয়েছে এই বিনিয়োগ ৩ বছরের মধ্যে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে এবং কীভাবে কোন তারিখে কতটা কমাবে তা জানাতে বলা হয়েছিল।

“কোন কোন ব্যাংক তাদের এক্সপোজার কমানোর পরিকল্পনা দিয়েছে। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কীভাবে কোন তারিখে কমাবে তা দেয়নি। আমরা তাদের এগুলো দিতে বলেছি।”

আলী রেজা ইফতেখার বলেন, “কিছু ঋণমান থেকে সরে গেছে। বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এমনটা হয়েছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু গোষ্ঠী যে কাজে ঋণ নিয়েছেন সেই কাজে বিনিয়োগ করেননি।

“যেকারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এজন্য আমরা বলছি ঋণ বিতরণে আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে খেলাপি ঋণ না বাড়ে।”

সাবংবাদিকদের এস কে সুর জানান, সভায় অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ কেনার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।

সম্প্রতি কোন কোন ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ কিনে নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো খেলাপি বা মেয়াদোত্তীর্ণ।

এধরনের ঋণ কেনার ঘটনা নিয়েও ব্যাংকার্সদের সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গভর্নর।