আমদানি বাড়ায় উদ্বৃত্তে টান

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) কমছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বৃত্তে টান পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2014, 06:31 PM
Updated : 19 July 2014, 06:31 PM

৩০ জুন ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে ব্যালান্স অফ পেমেন্টের ১১ মাসের (জুলাই-মে) তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে অর্থাৎ ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৫৪ কোটি ৩০ লাখ ( ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরের এই একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে গত অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ব্যালান্স অফ পেমেন্ট প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে।

২০১২-১৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ২৫২ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

তার আগের বছরে (২০১১-১২) বাংলাদেশ সরকারের ব্যালান্স অফ পেমেন্টে কোনো উদ্বৃত্ত ছিল না; উল্টো তা ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণাত্মক (-) ছিল।

২০১০-১১ অর্থবছরে ১৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ঋণাত্মক (-) উদ্বৃত্ত ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরেও লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত দিয়ে অর্থবছর শুরু করে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সে ধারাই অব্যাহত ছিল।

৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, চালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে, যার ফলে কমছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের উদ্বৃত্ত।

গত অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) উদ্বৃত্ত ছিল ২০২ কোটি ডলার। মে মাস শেষে অর্থাৎ ১১ মাসে সেই উদ্বৃত্ত কমে ১৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

এ সব তথ্য পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস ব্যালান্স অফ পেমেন্টে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায়ই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বছরের শেষ দিকে এসে সে অবস্থা আর নেই।

“জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। সে কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। যার ফলে ব্যালান্স অফ পেমেন্টও কমছে।”

তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেড় বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ‘খারাপ’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জায়েদ বখত।

এ প্রসঙ্গে তিনি ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরের ঋণাত্মক (-) উদ্বৃত্তের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৮ কোটি ডলার

আমদানি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জুলাই-মে সময়ে তিন হাজার ৩১৮ কোটি ৫০ লাখ (৩৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে এই ১১ মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি (২৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা পূর্বের অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবে এই ১১ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ৫০ লাখ (৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৩০ কোটি ৪০ লাখ (৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলার।

২০১২-১৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ডলার।

২০১১-১২ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৩২ কোটি ডলার, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ঘাটতি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বরাবরই পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার কারণে খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটি ডলারে।

তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা ৪৭১ কোটি ডলারে নেমে আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।