বন্দরে দিনে অর্ধ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন: টিআইবি

শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড় প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজে দৈনিক অর্ধ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2014, 12:29 PM
Updated : 14 July 2014, 12:36 PM

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন নিয়ে সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই দাবি করে দুর্নীতিবিরোধী এই প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্দরটিতে দালাল চক্রের হাতে পুরো কার্যক্রম জিম্মি রয়েছে বলে দাবি করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি অটোমেশনের কার্যকর বাস্তবায়নে ৯ দফা সুপারিশও করেছে টিআইবি।

রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম ম্যানেজার) মনজুর-ই খোদা ও জুলিয়েট রোজেটি।

শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড় প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্কায়নের বিভিন্ন ধাপে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, কায়িক পরীক্ষণে ১০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দৈনিক ন্যূনতম ৪৭ দশমিক ৫ লাখ টাকা এবং পণ্য ছাড়ে দৈনিক ন্যূনতম ১৭ দশমিক ২ লাখ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায় হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অটোমেশন বাস্তবায়নে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের কার্যকর সফলতা অর্জিত হয়নি। অন্যদিকে কাস্টম হাউজে অটোমেশনের মাধ্যমে কাগজবিহীন অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো প্রতিটি ধাপে ম্যানুয়াল স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এছাড়া কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সহায়তাকারী হিসেবে অবৈধভাবে ৬০-৭০ জন ব্যক্তির নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমার্শিয়াল পণ্যের শুল্কমূল্য পরিশোধ চালু না হওয়া ইত্যাদি সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শুল্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের একাংশ, বন্দর কর্মকর্তাদের একাংশ ও ব্যবসায়ীদের একাংশের যোগসাজশ ও কারসাজির কারণে অবৈধ লেনদেন হয়।

“কিছু ফালতু বা বদি আলম গ্রুপের (দালালদের স্থানীয়ভাবে এ নামে ডাকা হয়) জিম্মি করে রেখেছে বন্দর ও কাস্টম হাউজ। এদের কারণে বন্দর ও শুল্ক ব্যবস্থায় সুশাসন ব্যাহত হচ্ছে।”

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭-২০০৮ সালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য কমেছিল বলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের পর্যবেক্ষণ।  

“এখন সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া সম্ভব,” বলেন তিনি।

আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নে টিআইবির উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে - শুল্কায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন সুবিধার আওতায় আনা, বন্দরে বাল্ক পণ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন বাস্তবায়ন করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও নৈতিক আচরণ বিধি প্রণয়ন এবং বছরে একবার সংশ্লিষ্টদের সম্পদের হিসাব ও বিবরণ প্রকাশ করা।

২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বন্দর ও কাস্টম হাউজের ওপর পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান, উপ-নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়েরও উপস্থিত ছিলেন।