দিনে ১০০ টাকা মজুরিও পান না ৩২ শতাংশ নারী

বাংলাদেশে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৩২ শতাংশ নারী শ্রমিক ১০০ টাকারও কম মজুরি পান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2014, 02:49 PM
Updated : 13 July 2014, 03:02 PM

‘নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬১ শতাংশ নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং ৩২ শতাংশ দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান।

অন্যদিকে ৫৬ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান বলে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের (এসটিডি) যৌথভাবে চালানো এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় এই গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এসটিডির নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার এবং সমন্বয়ক সাইফ ইকবাল।

বাংলাদেশের ছয়টি বিভাগের আটটি জেলার আট উপজেলায় ৮৩ জন নারী উদ্যোক্তা এবং ৬৮ জন নারী শ্রমিক ও ৫১ জন পুরুষ শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়েছে।

রঞ্জন কর্মকার বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত, নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি এবং আয় বৈষম্য সম্পর্কে ধারণা লাভ, সম্পত্তির ওপর নারীর অধিকার এবং এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে জানাই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল।

প্রতিবেদন প্রকাশ ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের অ্যাক্টিং ন্যাশনাল ডিরেক্টর জিনপো ওলোও-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছবি বিশ্বাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি আয়েশা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ।

আলোচকরা বলেন, বাজারে অভিগম্যতা বা প্রবেশ, ন্যায্য মজুরি এবং সম্পত্তিতে সমঅধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া সামাজিক ন্যায্যতা সম্ভব নয়। একইভাবে নারীর জন্য সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত না হলে অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়।

এজন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধের ইতিবাচক পরিবর্তন, নারীবান্ধব পরিবেশ ও রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন প্রয়োজন বলে মত দেন তারা।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে নারী অধিকার আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন আয়েশা খানম।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ নারীর অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিতে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও মূল্যবোধ পরিবর্তনের ওপর জোর দেন।

সম্পত্তিতে সমঅধিকার বিষয়সহ নানা ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি।

সুলতানা কামাল নারী শ্রমিকদের বৈষম্যের বিষয়ে বলেন, “নারীরা অনেক পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পান না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মূল্যবোধের বিষয়ে সজাগ থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।”

গবেষণাপত্রে বলা হয়, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের কারণে আজ নারীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কাজ করছেন।

দারিদ্র্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির কারণে নারীরা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তবে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা ও আর্থ-সামাজিক কাঠামোর কারণে নারীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

পণ্য বাজারজাতকরণ ও পরিবহণে সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব, পারিবারিক বাধা এবং বাজার সম্পর্কিত তথ্য না পাওয়া উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে নারীর প্রধান অন্তরায় বলে চিহ্নিত করা হয়।

জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হলে এই বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য বাজারজাতকরণ, উপার্জিত অর্থব্যয়ের ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান এবং উচ্চশিক্ষার প্রসারের সুপারিশ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।