খেলাপি ঋণের চাপে বেসিক ব্যাংক

কেলেঙ্কারির কারণে চাপে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে চার বছরে প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2014, 05:29 PM
Updated : 10 July 2014, 05:29 PM

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে বিশেষায়িত এই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, বর্তমান তা ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সালে নয়টি প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ৪৫৬ কোটি টাকা, ২০১০ সালে আটটি প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ৪৯৮ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ৮৮১ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে মোট মূলধনের ২ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। মূলধন থাকার কথা ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, আছে ৪৭৪ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ঘাটতির পরিমাণ ৬৫৮ কোটি টাকারও বেশি।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বেসিক ব্যাংকের বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এখন যারা দায়ী, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

“এজন্য আমরা নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সময় দিয়েছি। আমরা দেখতে চাই তারা কী ব্যবস্থা নেয়। তাদের পদক্ষেপ যথাযথ না হলে কমিটি এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে।”

ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয় গত মে মাসে। সম্প্রতি এর চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলে নতুন করে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি শওকত আলী বলেন, “যারা জড়িত তাদের বরখাস্ত করা যথেষ্ট নয়। এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

কমিটি এখন পর্যন্ত এই দুর্নীতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলেও জানান তিনি।

ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়ম সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলেছে, বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ, কারওয়ানবাজার শাখায় ৮টি প্রতিষ্ঠান, শান্তিনগর শাখায় ৫টি প্রতিষ্ঠান, প্রধান শাখায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান এবং দিলকুশা শাখায় ১১টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম উদঘাটিত হয়েছে।

“ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভুতভাবে তৃতীয়পক্ষের জাল দলিল বন্ধক হিসেবে গ্রহণ করেছে।”

এছাড়াও ব্যবসাস্থল পরিদর্শন না করে ঋণ প্রস্তাব পেশ, অনেক গ্রাহকের সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করা, তড়িঘড়ি চলতি হিসাব খুলে অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, প্রয়োজনীয় আনানত ছাড়াই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তথ্যও মন্ত্রণালয় পেয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন চেয়ারম্যানকে অনিয়ম তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সরকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদেও চিহ্নিত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা করা হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কোথায় কী অনিয়ম হয়েছে তা নতুন পর্ষদ তদন্ত করে দেখবে।

এদিকে বেসিক ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সংসদীয় কমিটি সরকারি টাকা লোপাটের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করেছে। তারা দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

দরকার হলে উপ- কমিটি গঠন করে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করা হবে জানিয়ে কমিটির সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “শুধু পরিচালনা পর্যদ পরিবর্তন করলে হবে না। ভবিষ্যতে যাতে অনিয়ম-দূর্নীতি না হয়, সেজন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

বৈঠকে কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, মুহিবুর রহমান মানিক, হাবিবর রহমান, আব্দুর রউফ, নাভানা আক্তারও অংশ নেন।