ব্যাংকগুলোর সিআরআর বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা রাখার (সিআরআর) পরিমাণ ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2014, 01:05 PM
Updated : 23 June 2014, 06:46 PM

সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২ (১৯৭২ সনের আদেশ নং-১২৭) এর ৩৬(১) ধারা অনুসারে বাংলাদেশে অনুমতিপ্রাপ্ত সব তফসিলি ব্যাংক (শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ) কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা রাখিবার যে বিধান রহিয়াছে উহার পরিমাণ অত্র আদেশের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ৬ শতাংশ হইতে বৃদ্ধি করিয়া ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হইল।”

২৪ জুন মঙ্গলবার থেকে এ আদেশ কার‌্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআরআর বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাজারে এখন অনেক বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য আছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্ভবত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআরআর বাড়িয়েছে। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।”

সালেহ উদ্দিন বলেন, সিআরআর বাড়ানোর মাধ্যমে বাজার থেকে টাকার সরবরাহ কমানোর উদ্যোগ নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও তা স্বীকার করেছেন।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে প্রতিটি ব্যাংককে তার মোট আমানতের সাড়ে ৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। এই সাড়ে ৬ শতাংশের হিসাব করা হবে ১৫ দিন পরপর। তবে দৈনিক মোট আমানতের ৬ শতাংশের কম রাখা যাবে না।

অর্থ্যাৎ ব্যাংকগুলোকে এখন প্রতি ১৫ দিন শেষে মোট আমানতের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রত্যেকদিন মোট আমানতের ৬ শতাংশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

কোনো ব্যাংক এর কম জমা রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটিকে জরিমানা করবে।

এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে এখন প্রতিদিন আরো প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা চলে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে।

সিআরআর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাসান জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন কারণেই আমরা সিআরআর বাড়িয়েছি। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সাময়িকভাবে ট্রেজারি অকশন বন্ধ করেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত তারল্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিভার্স রেপোতে বিনিয়োগে আসছে। এতে অতিরিক্ত সুদ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

“আবার সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ফলে সিআরআর বিনিয়োগে কোনো সমস্যা হবে না। অন্যদিকে আমাদের রিজার্ভ মানির অর্জন ধরে রাখতে সহায়তা করবে, যা খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে।

এদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর পরই সিআরআর বাড়ানোর বিষয়ে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) প্রসঙ্গ’ শীর্ষক ওই সার্কুলারে বলা হয়,  ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বরের  সার্কুলার নং ০৪ মোতাবেক বর্তমানে বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংক (শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকসহ)-কে তাদের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ৬ (ছয়) শতাংশ দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে এবং ন্যূনতম ৫ দশমিক ৫ (সাড়ে পাঁচ) শতাংশ দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ জমা হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়।

মূদ্রানীতির উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, ২০১৪ সালের ২৪ জুন হতে উল্লিখিত নগদ জমা সংরক্ষণের হার দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৫ (সাড়ে ছয়) শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৬ (ছয়) শতাংশ হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট- টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

আর গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৫ জুন সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নীচে নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন।