বেসিক ব্যাংকের এমডি অপসারিত

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2014, 01:22 PM
Updated : 25 May 2014, 04:18 PM

রোববার বিকাল বিকাল ৫টায় এক চিঠি দিয়ে কাজী ফখরুলকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানির আইনের ৪৬ ধারায় আইন লঙ্ঘন ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রোববার থেকেই অপসারণের এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

এস কে সুর বলেন, “অনিয়ম-দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারকের শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন না করায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে।”

আগামী ৮ জুন বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে কাজী ফখরুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

২০১১ সালের ৮ জুন এই ব্যাংকে যোগদানের আগে সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে দৃষ্টান্তমূলক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত বেসিক ব্যাংক নিয়ম-নীতি মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ভালো মুনাফা করছিল। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পরই শুরু হয় বিপর্যয়।

ঋণ জালিয়াতিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ অযোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বয়সের নিয়মও মানা হয়নি।

এমনকি পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের নিজস্ব নিয়োগবিধিও লঙ্ঘন করেছে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে ধরা পড়ে।

ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকসহ দেশের গোটা আর্থিক খাতের বড় ধরনের সংকটের মধ্যেই বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি ব্যাপকারে প্রকাশ পেল।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে এর গুলশান শাখা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর ও দিলকুশা শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম ধরা পড়েছে।

এর মধ্যে গুলশান শাখায় একহাজার ৭০০, শান্তিনগর একহাজার ৯০০ ও দিলকুশা শাখায় একহাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়েছে।

এসব ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল একজন উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখখাস্ত করে।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের ১১টি সভায় অনুমোদিত তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে ভাগই গুরুতর অনিয়মের মধ্যে হয়েছে।ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না জেনেও ঋণ দেওয়া হয়েছে।

এসব অনিয়ম ঠেকাতে গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ওই সমঝোতা অনুযায়ী বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি প্রতি তিন মাসে ১০ শতাংশের বেশি হবে না।

এছাড়া কোনো ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত নেওয়া না থাকেল তা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়।

ওই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, মন্দ ঋণ কমানো ও খেলাপি ঋণ আদায়সহ বেশকিছু শর্তও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব শর্তের অধিকাংশই পরিপালন করা হয়নি।

সমঝোতা স্মারকের শর্ত কেন পরিপালন করা হচ্ছে না তা জানতে চেয়ে চলতি বছরের শুরুতে কাজী ফখরুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি সেই নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে গত ১৯ মে তাকে শুনানিতে ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।