বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা বন্ধ হচ্ছে: মন্ত্রী

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা শিগগিরই বন্ধ করে দেয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন।

শেখ আব্দুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2014, 04:37 PM
Updated : 22 May 2014, 05:03 PM

বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডের লভ্যাংশ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আজকে একটা ভালো দিন। এটা এজন্য বলছি, রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশের টাকা দিচ্ছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংক হল-মার্কের ঘটনায় আমাদের মান সম্মান নষ্ট করেছে।

“আরেকটি জালিয়াতির ঘটনা আরেক রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে ঘটেছে, যা এখনো কেউ জানে না। একারণে আমরা বেসিকের গুলশান শাখা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”  

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম হয়েছে। এর অধিকাংশই এখন খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। এসব ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ফাইল ছবি

এসব ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য ব্যাংকটির সঙ্গে গত বছর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও ঋণ অনিয়ম বন্ধ হয়নি।

ঋণ জালিয়াতি নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ বিচারিক কমিটি।

দুর্নীতি দমন কমিশনও(দুদক) এসব ঘটনার তদন্ত করছে।

এছাড়া ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৩২৯তম সভায় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করেছে পর্ষদ, যাদের মধ্যে গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক ও ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক শিফার আহমেদ ও ঋণ বিভাগের প্রধান উপ ব্যবস্থাপক জাহিদ হাসান রয়েছেন।

চাকরিচ্যুত অন্য কর্মকর্তাও ব্যাংকের ঋণ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গুলশান শাখায় ঋণ জালিয়াতিতে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। মামা-ভাগ্নে নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২৪৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দলের সদস্যরা এই ঋণকে ‘গায়েবি ঋণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ভুয়া পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে জনৈক জুয়েল নামের এক ব্যক্তিকে ৩৩৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের একজন সাবেক পরিচালককে অবৈধ সুবিধা দিয়েছে বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা। নিয়মিত লেনদেন না থাকার পরেও বাড়ানো হয়েছে তার ঋণসীমা। আর কোন ধরনের ডাউনপেমেন্ট না নিয়ে বারবার তার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে এই তথ্য উঠে আসার পর বেসিকের গুলশান শাখার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে গুলশান শাখায় ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও তদারকিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং যেসব ঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত ছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বলা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড সরকারকে ২০১৩ সালের জন্য প্রায় ১৩ কোটি টাকার (১০ লাখ পাউন্ড) লভ্যাংশ দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান অর্থমন্ত্রীর হাতে লভ্যাংশের চেক তুলে দেন।

২০১২ সালে সরকারকে চার লাখ পাউন্ড মুনাফা দিয়েছিল তারা।

বাংলাদেশ সরকার ও সোনালী ব্যাংকের মালিকানা থাকলেও সোনালী ব্যাংক ইউকে যুক্তরাজ্য সরকারের আইন-কানুন মেনে ব্যাংক অব ইংলান্ডের লাইসেন্স নিয়ে স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসাবে ব্যবসা পরিচালনা করে।

ছয়টি শাখা ও ৬৬ জন কর্মকর্তার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সেবা দিচ্ছে ব্যাংকটি।

২০০১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও প্রথম দিকে রেমিট্যান্স ব্যবসাই ছিল তাদের মূল কাজ। ২০০৭ পর্যন্ত লোকসানে চলে এই ব্যাংক। পরবর্তীতে ব্যবসায় নতুন নতুন পণ্য যোগ করায় লভ্যাংশ আসা শুরু করে।

অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।