‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধি বোঝা বাড়াতে পারে’

উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না হলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধি সরকারের ঋণের বোঝাকে আরো বাড়াবে বলে মনে করছেন গবেষক জায়েদ বখত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2014, 02:37 PM
Updated : 10 May 2014, 02:37 PM

সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা বলেন।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।

এই সংখ্যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস) চেয়ে দশ গুণ এবং জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে এগারো গুণ বেশি।

সর্বশেষ মার্চ মাসে এক হাজার ২১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

গত বছরের মার্চে যার পরিমাণ ছিল মাত্র দেড়শ কোটি টাকা।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে-এমন বিশ্লেষণ টেনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার সম্প্রসারণমূলক অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। সে কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছে।

“যদিও এর ফলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বাড়ছে, তারপরও সম্প্রসারণমূলক নীতির কারণে এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবছে না।”

জায়েদ বখত বলেন, “সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি। কোন কোনটা ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই ঋণের বোঝা বাড়বে।

“তবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের এই অর্থ যদি উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হয় তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধি।”

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের পর সবাই এখন নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। একবার এ খাতে টাকা ঢুকলে তা বের হতে অনেক সময় লাগে।

“মানুষ এখন একটু বেশি মুনাফার আশায় নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র কিনছে।”

বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনদেনে যে খরা চলছে তা সঞ্চয়পত্র বিক্রি বৃদ্ধির একটি কারণ বলে মনে করেন ফারুক সিদ্দিকী।

ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ২৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।

গত কয়েক মাস ধরেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সহনীয় পর‌্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন জায়েদ বখত।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলো থেকে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ধার নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।

এরমধ্যে প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।

এটি বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।

২০১০-১১ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে দুই হাজার ৫৭ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরো কমে ৪৭৯ কোটি টাকা হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মোট পরিমাণ থেকে আগের বিক্রিত সঞ্চয়পত্রের নগদায়নের পরিমাণ বাদ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশকে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি বলা হয়। নগদায়নের ক্ষেত্রে গ্রাহককে সুদসহ আসল পরিশোধ করা হয়।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে যেসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার ৮০ শতাংশেরও বেশি পরিবার সঞ্চয়পত্র, ১৫ শতাংশ পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং বাকিটা অন্যান্য সঞ্চয়পত্র।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার যেখানে ১০ শতাংশের নিচে।

শুধু নারীদের জন্য এই পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু হয় ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে। এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার তা বন্ধ করে দিলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় চালু করা হয়।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়াও প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ছয় মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।