ইন্টারনেট গ্রামে ছড়িয়ে দিতে বড় প্রকল্প

গ্রাম পর‌্যন্ত ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এক হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 02:17 PM
Updated : 22 April 2014, 03:04 PM

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পসহ দুই হাজার ৭২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এনজিএন ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্পে সাহায্য হিসেবে এক  হাজার ৪৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা দেবে চীন সরকার। বাকি ৪০৮ কোটি টাকা সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে।

আগামী জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে হবে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের কার‌্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে জাতীয় পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করা যাবে।

ইন্টারনেট টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সিং চালুর সুযোগ সৃষ্টি হবে। সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানও সম্ভব হবে।

প্রকল্পের আওতায় সাত লাখ সংযোগ ক্ষমতাসম্পন্ন ঢাকায় একটি ইন্টারনেট প্রটোকল মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম (আইএসএস) প্লাটফর্ম স্থাপন করা হবে। এর অতিরিক্ত হিসেবে চট্টগ্রামে একই ক্ষমতাসম্পন্ন আরো একটি আইএসএস প্লাটফর্ম স্থাপিত হবে।

কার‌্যপত্রে বলা হয়, দেশে বেসরকারি খাতে একাধিক মোবাইল অপারেটর থাকলেও তারা মূলত ভয়েস কল সেবা প্রদান করে থাকে। সীমাবদ্ধ ব্যান্ডইউথে ডাটা সার্ভিস (ইন্টারনেট) প্রদান করলেও তা বেশ ব্যয়বহুল।

“এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিটিসিএলের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন করে ভয়েস কলের পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ভিডিও আদান-প্রদান সেবা প্রদান করা হবে। ১০ লাখ ল্যান্ড টেলিফোন গ্রাহকদের নতুন করে সংযোগ না নিয়ে ইন্টারনেট সুবিধার আওতাভুক্ত হবে।”

এর ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য দেশে একটি সুষম ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে বলে কার‌্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সোমবারের সভায় ২ হাজার ৭২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার ৫টি প্রকল্প পাস হয়। মোট প্রকল্প বরাদ্দের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬১৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা, প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৪শ ৫৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। ৫টি প্রকল্পের মধ্যে নতুন প্রকল্প ৪টি বাকি ১টি সংশোধিত প্রকল্প। ৩টি প্রকল্প সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিটিসিএল ভয়েস কল ছাড়াও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য বিদ্যমান এক্সচেঞ্জগুলোতে স্থাপিত কম ক্ষমতাসম্পন্ন পুরানো ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি আধুনিক ইন্টারনেট এবং মাল্টিমিডিয়া বেইজড ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত করবে।

এজন্য বিটিসিএল বিদ্যমান কপার বেইজড মূল টেলিফোন নেটওয়ার্ক উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক দ্বারা প্রতিস্থাপন করবে।

“জনসাধারণের জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে আইসিটি সুবিধা পৌঁছে দিয়ে দেশে টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি এবং টেলিএক্সেস সুবিধার আরো সম্প্রসারণ করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।”

সভায় আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কিনতে একশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষে সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় ঢাকা আহসানিয়া মিশন ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে।

এই হাসপাতালের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করার লক্ষে একশ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যাতে সরকার ৬০ কোটি টাকা দেবে। বাকী ৪০ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা আহসানিয়া মিশন যৌথভাবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

“এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার ও চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।”

একইসঙ্গে ক্যান্সার রোগীদের জন্য ডাটাবেইজ তৈরি করে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন লাইনে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে অনুমোদিত প্রকল্পের কার‌্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সভায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার লাকসাম (দৌলতগঞ্জ)-নাঙ্গলকোট-কোদালিয়া-ঢালুয়া-চিত্তরা বাজার সড়ক উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি প্রয়াত সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূইয়ার নামে নামকরণ করা হয়। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সাথে কুমিল্লা জেলার লাকসাম, নাঙ্গলকোট এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উন্নততর ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।

৩১ দশমিক ৪ কি.মি. দৈঘ্যের এ সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে স্বল্পতম সময়ে যাতায়াতসহ কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য দ্রুত পরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সভায় জানানো হয়।

সভায় হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন এবং হাওর  অঞ্চলে মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক ৬৪ কোটি ৪৩ লাখ এবং ৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার পৃথক দুটি প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প দুটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত হবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর এলাকায় তিনটি আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে মৎস্য অবতরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন সুবিধাদি উন্নততর করা হবে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

অপরদিকে হাওর অঞ্চলে মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। দেশের সাত জেলার ৪৮ উপজেলায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

বিল নার্সারি ও মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করে পোনা মজুদ ও মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল উন্নয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত জলাশয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে কার‌্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন।