এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকারের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দুই শতাংশ কম।

আবদুর রহিম হারমাছিপ্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2014, 07:25 PM
Updated : 16 April 2014, 07:25 PM

গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৯ শতাংশ।

হরতাল-অবরোধসহ সংঘাতের রাজনীতি এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতির অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। তবে অর্থবছর শেষে এর বাস্তবায়নের হার ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম অবশ্য পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “নয় মাসে যেখানে ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তিন মাসে সেখানে ৫৩ শতাংশ  কিভাবে সম্ভব?

“বাস্তবায়ন বেশি দেখাতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করলে বা অর্থ ছাড় করলে সেই কাজের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা যেমন নিশ্চিত হবে না। তেমনি কাজের মানও ভাল হবে না।”

‘শুধু শুধু বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর মানসিকতা’ থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকে পরামর্শ দেন আজিজুল ইসলাম।

'Tk 543 bn ADP set to be okayed'

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাজের গতি ধীর-এটা বলা ঠিক হবে না। শতাংশ হিসাবে গতবারের চেয়ে বাস্তবায়ন কম হলেও টাকার অংকে কিন্তু বেশি হয়েছে।

“গত বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ৬০ হাজার কোটি টকার এডিপির ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়ন মোটেই খারাপ নয়।”

তিনি বলেন, “সংশোধিত এডিপি যদি ৫৫ হাজার কোটি টাকা হত তাহলে এই নয় মাসে বাস্তবায়নের হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি হত।”

এরপরও অর্থবছর শেষে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯০ শতাংশের বেশি হবে বলে আশা করছেন সামসুল আলম।

“অস্থিরতার মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে এখন জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে,” বলেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল এডিপির আকার ছিল ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। আর পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। গত ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসির (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ)বৈঠকে ৬০ হাজার কোটি টাকার আরএডিপি (সংশোধিত এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়।

আরএডিপিতে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

সংশোধিত এডিপির ৩৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা স্থানীয়ভাবে জোগান দেয়া হচ্ছে। আর বাকি ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকার সংস্থান হচ্ছে প্রকল্প সাহায্য থেকে।

নতুন প্রকল্পসহ সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৪টি। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ২০২টি। আর এ বছর শেষ হবে এমন প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩৬টি।

অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর টানাপোড়েনের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চাওয়া ৬০ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ৬০ হাজার ৫৮২ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি চেয়েছিল। কিন্তু রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি, বাস্তবায়নের গতিসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে অর্থমন্ত্রণালয় তা কোনো অবস্থাতেই ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি করতে রাজি হচ্ছিল না।

সংশোধিত এডিপির আকার নিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে দুজনই পরস্পরকে বাক্যবাণে জর্জরিতও করেছেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়ন হয় ৩৮ শতাংশ। নয় মাসে (মার্চ পর্যন্ত) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে।

২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৯ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার এখনো ২০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার প্রায় শূন্যের কোটায়। তিন প্রকল্পে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এই মন্ত্রণালয় গত নয় মাসে খরচ করেছে এক কোটি টাকারও কম।

এছাড়া সেতু বিভাগ বরাদ্দের মাত্র ৫ শতাংশ অর্থ খরচ করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে।

বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নয় মাসে এই বিভাগ বরাদ্দের ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ খরচ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সময়ে এই মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৫১ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে। এ ছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৪৮ শতাংশ অর্থ খরচ করতে সক্ষম হয়েছে।

এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতি প্রসঙ্গে আজিজুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের ঢিলেমি, উন্নয়ন সহযোগীদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা ও অর্থ সংকটের কারণে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে ভাটা পড়েছে।

“এর বাইরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নজরদারিও কমে গেছে। সেই সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের চাপও তেমন নেই।”

গত অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ শতাংশ।

নতুন এডিপি ৭৯ হাজার ২০ কোটি টাকা

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম বলেন, আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ৭৯ হাজার ২০ কোটি টাকা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসির বৈঠকে এই এডিপি অনুমোদন দেয়া হবে।

নতুন এডিপিতে স্থানীয় এবং বিদেশি অর্থের অংশ কী হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান সামসুল আলম।

আর আগামী অর্থবছরের মোট বাজেটের আকার দুই লাখ ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকা হবে বলে জানান তিনি।