বিড়ি-সিগারেট থেকে রাজস্বে উল্টো ধারা

প্রতিবছর বিড়ি-সিগারেট থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়লেও গত অর্থবছরে হঠাৎ করেই সে ধারা পাল্টে যায়। চলতি অর্থবছরেও এ খাত থেকে রাজস্ব কম আসায় উদ্বিগ্ন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2014, 07:08 PM
Updated : 2 April 2014, 07:08 PM

‘নির্বাচনী প্রচারণায় তামাক নয়’

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে বিড়ি-সিগারেট থেকে ১০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছিল। গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) তা কমে নয় হাজার ৯২৮ কোটি টাকায় আসে।

চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিড়ি-সিগারেট খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও সর্বশেষ হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মত রাজস্ব এসেছে।

বুধবার ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিড়ি-সিগারেট খাতের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে উম্মা প্রকাশ করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন।

তিনি বলেন, “সরকারের কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে এই খাত থেকে। এবার তাদের কাছ থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তারা (সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স) বড় ব্যবসায়ী।তারা কি আর এই আলোচনায় আসবে।”

আলোচনায় যোগ দিতে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে জানান তিনি।

চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের হিসাবে রাজস্ব আদায়ে ধীর গতি থাকলেও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন গোলাম হোসেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেটে কম দামী সিগারেটের শুল্ক ছাড়ের কারণেই এই খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিবছরই আমরা এনবিআরের পক্ষ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে সব ধরনের সিগারেটের উপর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ট্যাক্স আদায়ের লক্ষ্য রেখে বাজেটে প্রস্তাব করি।

“বিড়ি-সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-উল্লেখ করে প্রতিবছরই এ খাতকে নিরুৎসাহিত করতে বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ও ভিত্তিমূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলের নানা ধরনের চাপে বেশি দামের সিগারেটের উপর বেশি শুল্ক (কর) আরোপ বহাল রাখা সম্ভব হলেও কম দামের বিড়ি-সিগারেটের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়।”

এনবিআরের এই কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকেও কমদামি বিড়ি-সিগারেটে ট্যাক্স আরোপের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে বলা হয়ে থাকে। অথচ দেশে কম দামের সিগারেটের চাহিদাই প্রায় ৬৫ শতাংশ।

এ সব কারণেই এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব কমছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সরকার এই খাত থেকে যে রাজস্ব পায় তার ২৮ শতাংশ আসে কম দামের বিড়ি-সিগারেট থেকে। বাকি ৭২ শতাংশই আসে বেশি দামের সিগারেট থেকে।

বিড়ি-সিগারেট খাতের কিছু ব্যবসায়ীর রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে বলেও স্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিড়ি-সিগারেট খাত থেকে পাঁচ হাজার ১২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আসে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বেড়ে ছয় হাজার ৩৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

২০১০-১১ অর্থবছরে এই খাত থেকে আসে সাত হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে ১০ হাজার ১৭৬ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।

তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই রাজস্ব ৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকায় নেমে আসে।