সুদহারের স্প্রেড আবারো ৫ শতাংশ ছাড়ালো

ঋণ ও আমানতের সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য (স্প্রেড) আবারো পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2014, 01:54 PM
Updated : 1 April 2014, 01:54 PM

সুদহার বিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এই হিসাবে ঋণ ও আমানতের সুদহারের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বর মাসেও একই স্প্রেড ছিল।

সুদহারের স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে রাখতে কয়েকবছর ধরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্প্রেড ৫ শতাংশের কম হওয়াই উচিত। অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকঋণের সুদহার সহনীয় হতে হবে।

“কিন্তু মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সুদহার বেঁধে দেয়ার সুযোগ নেই। এজন্য আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বলছি স্প্রেডকে ৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে স্প্রেড ছিল ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ওই সময় আমানতের গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, ঋণের গড় সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারির শেষে আমানতের সুদ হার কমলেও ঋণের সুদ হার বেড়েছে।

এবিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো কোনো ব্যাংকের ‘নন পারফর্মিং লোন’ বেশি হওয়ায় সেগুলোতে বেশি হারে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হয়েছে।

“এই কারণে তারা সুদ হার কমাতে না পারায় ব্যাংক খাতের সামগ্রিক স্প্রেড বেড়েছে।”

তবে স্প্রেড বাড়ার পেছনে কারণ হিসেবে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য থাকাকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় ব্যাংকগুলো তহবিল সংগ্রহের ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) কমাতে আমানতের সুদ হার কমাচ্ছে। কিন্তু ঋণের সুদহার সেভাবে কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে স্প্রেড বাড়ছে।

অর্থনীতিতে স্প্রেড বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডিএসের এই গবেষণা পরিচালক বলেন, “স্প্রেড বাড়ার অর্থ হচ্ছে সুদ হার বেড়ে যাওয়া। আর সুদ বেশি হলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়। কারণ উচ্চ সুদে বিনিয়োগ করতে কোনো বিনিয়োগকারীই আগ্রহী হন না।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক বাকি তিনটি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের নীচে রয়েছে। রূপালী ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।

ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড বিদেশি স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। ব্যাংকটি গড়ে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ সুদে আাঁনত সংগ্রহ করে গড়ে ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করছে।

বিদেশি সিটিব্যাংক এনএ’র স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। গড় মাত্র ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে আমানত সংগ্রহ করে ঋণ বিতরণ করে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে বেশি, ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি শেষে এই ব্যাংকের আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এরপরেই রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এছাড়াও ১৬টি বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের বেশি।