কয়লা তুলতে উন্মুক্ত পদ্ধতির দিকে সরকার

বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে আমদানির পাশাপাশি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার দিকে তাকিয়ে আছে সরকার, যদিও এর বিরোধিতা রয়েছে দেশেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2014, 07:15 PM
Updated : 3 Feb 2014, 01:03 PM

রোববার পেট্রোসেন্টারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামান বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা তুলে ধরে এই ইঙ্গিত দেন।

তিনি বলেন, ভিশন-২০২১ সালের মধ্যে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ৫৩ শতাংশ আসবে কয়লা থেকে। এ চাহিদা পূরণ করতে প্রতিবছর ১ কোটি টন কয়লা উৎপাদন করতে হবে।

দেশে পাঁচটি কয়লা খনি থাকলেও ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে শুধু একটি খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার টনের মতো কয়লা উৎপাদন হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার হিসাবে, পাঁচটি খনিতে ৩১০ কোটি টনের মতো কয়লা মজুদ রয়েছে। কিন্তু কয়লা কিভাবে তোলা হবে তা নিয়ে গত দেড় দশকেও বিতর্ক থামিয়ে কয়লা নীতি করতে পারেনি সরকার।

উন্মুক্ত পদ্ধতির বিষয়ে অগ্রগতির কথা জানিয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, “বড়পুকুরিয়ার উত্তর অংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে হাইড্রো জিওলজিক্যাল সার্ভে ও ওয়াটার মডেলিংয়ের কাজ চলছে। আগামী এপ্রিলে প্রতিবেদন আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

বাংলাদেশের বিদ্যুতের প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে গ্যাস থেকে। এদিকে মোট গ্যাসের ৭২ শতাংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। মোট বিদ্যুতের ৩ শতাংশেরও কম আসছে কয়লা থেকে।

এ অবস্থার মধ্যে গত সরকারের আমলে কয়েকটি বড় বড় (বেইস লোড) কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ওরিয়ন গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপকে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া চীনের সঙ্গে যৌথভাবেও কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বানানো হবে বলে এর আগে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারের মাস্টার প্লানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ আসবে কয়লা থেকে, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ (৯ হাজার মেগাওয়াট) উৎপাদন হবে দেশের কয়লা দিয়ে এবং ২০ শতাংশ (৬ হাজার মেগাওয়াট) উৎপাদন হবে আমদানি করা কয়লা দিয়ে।

২০৩০ এর মধ্যে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কয়লা থেকে উৎপাদন করা সম্ভব কি না-জানতে চাওয়া হলে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে এজন্য পরিকল্পনা করে দেশের কয়লা উত্তোলন করতে হবে।”

“ছয় হাজার মেগাওয়াটের জন্যও যে পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে হবে তার জন্য অবকাঠামোও প্রস্তুত করতে হবে।”

পেট্রোবাংলার অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু তাহের বলেন, “আমরা যদি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যেতে পারি তাহলে বিরাট একটা সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কোন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন হবে সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা জ্বালানি বহুমূখীকরণে যাচ্ছি। নিজের দেশের কয়লা আমরা ব্যবহার করতে চাই, আবার কয়লা আমদানিও করতে চাই আমরা।”

জাতীয় জ্বালানি নীতি ও কয়লা নীতি তৈরি করা হবেও বলেও জানান তিনি।

কয়লা ব্যবহার নিয়ে আলোচনা

রোববার সকালে বিদ্যুৎ ভবনে ‘বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আঞ্জুমান ইসলাম ও কাজী আহমেদ পারভেজ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়। চীনে ৮১ শতাংশ, অষ্ট্রেলিয়ায় ৬৯ শতাংশ, ভারতে ৬৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে ৪৩ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্যে ২৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কয়লা থেকে।

“উচ্চ ক্ষমতার সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতেই ন্যূনতম দূষণ ঘটিয়ে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের উচিৎ ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে জ্বালানি বহুমূখীকরণের মাধ্যমে আরো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা।”

কয়লা বিদ্যুতের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে অনুষ্ঠানে বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ আহমেদ বলেন, “পৃথিবীতে যারা কয়লা ব্যবহার করছে, সেইসব দেশ কি ধ্বংস হয়ে গেছে? এখানে কয়লার বিরোধিতা করে যারা কথা বলেন, তাদের মাথায় থাকে ৩০/৫০ বছর আগের প্রযুক্তির কথা।”

বুয়েটের আরেক শিক্ষক দিল আফরোজ বলেন, “আমাদের এখানেও ভালো প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়া উচিৎ, এর কোনো বিকল্প নেই।”

রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকারমূলক ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে এটা রেখেছেন। সুতরাং আমরা রামপাল দ্রুত করবো।”

রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।