হল-মার্ক জালিয়াতি: অভিযোগপত্রে দুদকের অনুমোদন

সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্কের ঋণ জালিয়াতির মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2013, 10:59 AM
Updated : 16 Sept 2013, 07:03 PM

সোমবার কমিশনের সভায় এ তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদন পাওয়ার পর দুদকের কমিশনার (তদন্ত) সাহাবউদ্দিন চুপ্পু ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।

তিনি বলেন, “দীর্ঘ তদন্তের পর আজ দুদক হল-মার্কের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে। ২৫ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা চলবে।”

সোনালী ব্যাংকের ১২০০ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে।

সাহাবউদ্দিন চুপ্পু জানান,২০১০ সাল থেকে ১০১২ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে যারা ছিলেন তাদের কারো নাম এ তদন্ত প্রতিবেদনে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর নামও চুড়ান্ত প্রতিবেদনে আসেনি।

অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন- হল-মার্কের এমডি মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী হল-মার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ; ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া,সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. জিয়াউর রহমান, কর্মকতা মো. জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম,স্টার সিপিনিংয়ে মালিক আবদুল বাসির।

এছাড়া টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, প্যারাগন গ্রুপের পরিচালক সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারের নাম এসেছে অনুমোদন পাওয়া প্রতিবেদনে।

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান, আবদুল মতিন ও মেহেরুন্নেসা মেরি, ননী গোপাল নাথ, মফিজইদ্দিন, মীর মহিদুর রহমান, হুমায়ুন কবির, মাইনুল হক, আতিকুর রহমান, শেখ আলতাফ হোসেন, মো. সফিকউদ্দিন আহমেদ ও মো. কামরুল হোসেন খান।

দুদকের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করায় হুইসেল ব্লোয়ার অ্যাক্টের অধীনে এই মামলার দুই আসামি সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা সবিতা সিরাজ ও আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজীকে অভিযুক্তের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হল-মার্ক। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।

এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর হল-মার্কের এমডি, চেয়ারম্যানসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা করা হয়।

‘পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টতা নেই’

হল-মার্কের চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে (ফান্ডেড অংশ) সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য অভিযুক্তের তালিকায় নেই।

সাহাবউদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের বলেন, “কাউকে অভিযুক্ত করতে হলে তার সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে।

“আমাদের মনে রাখতে হবে এটা কোনো ঋণ কেলেঙ্কারি নয়। এটা একটা অভিনব জালিয়াতি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম। হল-মার্ক গ্রুপ ইনল্যান্ড বিল পার্চেজ (আইবিপি), ফ্রি ক্রেডিট স্টেটমেন্টের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়েছে।”

“ব্যাংকের শাখা ও হেডকোয়ার্টারের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এটা ঘটেছে। বোর্ডের (পরিচালনা পর্ষদ) সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই ধরনের লেনদেনের সঙ্গে বোর্ড যুক্ত ছিল না।”

পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সম্পদ বিবরণি দাখিলের নির্দেশ দেয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমাদের সন্দেহ ছিল, তারা এই জালিয়াতিতে যুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু পরে তদন্তে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।”

তানভীরের সঙ্গে উপদেষ্টার ‘সামাজিক’ সম্পর্ক

হল-মার্ক গ্রুপের পরিচালক তানভীর মাহমুদের সঙ্গে ‘সামাজিক’ সম্পর্ক থাকলেও ঋণ জালিয়াতিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী সংশ্লিষ্ট নন বলে জানান সাহাবউদ্দিন চুপ্পু।

“আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলেছেন। এটা সত্য যে হল-মার্ক কতৃপক্ষের সাথে তার একটা সামাজিক সম্পর্ক ছিল। একটি অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াতও করা হয়েছিল। এ রকম অনেকের সাথেই রয়েছে। এটা প্রমাণ করে না যে তিনি অভিযুক্ত।”

হলমার্ক জালিয়াতি তদন্তে একটি সংসদীয় উপ কমিটি গঠিত হয়েছিল, যাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টার ঘন ঘন যাতায়াত ‘অস্বাভাবিক’।

“আমরা ওই রিপোর্টটা পড়েছি। সেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো বর্ণনা দেয়া হয়নি,” বলেন দুদক কমিশনার।