ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদ কেনায় কড়াকড়ি

কোনো ব্যাংক এখন আর তার পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি দামের স্থায়ী সম্পদ কিনতে পারবে না।

শেখ আবদুল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2013, 02:49 PM
Updated : 13 August 2013, 03:01 AM

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ এবং জনস্বার্থে’ বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করেছে।

যেসব ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদের মোট পরিমাণ (বুক ভ্যালু) তাদের পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের সমান বা বেশি, এই নির্দেশনার ফলে সেসব ব্যাংক নতুন কোনো স্থায়ী সম্পদ কিনতে পারবে না।

তবে পরিশোধিত মূলধন বাড়ালে আনুপাতিক হারে স্থায়ী সম্পদ কেনার সুযোগ থাকবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ব্যাংকের বেশি সম্পদ রয়েছে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর তাগাদা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সময়মতো তা করতে না পারলে আনুপাতিক হারে অতিরিক্ত সম্পদ ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশনা আসতে পারে।

এর আগে ২০১০ সালে ২৫ জানুয়ারি এবং ২০১২ সালের ৩০ জুলাই দুটি আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থায়ী সম্পদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ দেয়।

২০১০ সালের আদেশে বলা হয়, কোনো ব্যাংক জমি কেনায় বিনিয়োগ করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর পরের প্রজ্ঞাপনে ভবন, ফ্লোর স্পেস বা দোকান কেনার ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু ব্যাংক তাদের পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন ভবনে ফ্লোর স্পেস ও জমি কেনায় বিনিয়োগ করে বসে আছে। ব্যাংকগুলোকে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয়া হয় তা দেশের আর্থিক উন্নয়ন তথা শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু ব্যাংকগুলো স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করায় সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।”

এতে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। একদিকে জমি বা ফ্লোর স্পেসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এ ধরনের সম্পদ নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষীগত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের তিনটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। আরও কিছু জায়গায় রয়েছে তাদের নিজস্ব ফ্লোর ও জমি। এরপরও ব্যাংকটি দিলকুশার আরেকটি ১০ তলা ভবন কেনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে।

একইভাবে মতিঝিলে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি ২০ তলা ভবন আছে; বাংলামোটরে নির্মাণ হচ্ছে এমটিবি টাওয়ার।

এসব ভবনে ব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ফ্লোর ভাড়া দেয়া হচ্ছে।

মতিঝিলের ইনার সার্কুলার রোডে এনসিসি ব্যাংক ২২ তলা ভবন নির্মাণ করছে। জমি ও ভবনের নির্মাণ খরচ হিসাব করলেই তা ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এর পাশেই নির্মাণ হচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিজস্ব ভবন।

পুরানা পল্টনে দৈনিক বাংলা মোড়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ২১ তলা ভবন উঠছে, যার প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৮ হাজার বর্গফুট।

পুরানা পল্টনে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ করছে আল আরাফাহ ব্যাংক। এর প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৭ হাজার বর্গফুট। পাশেই তিন তলা আরেকটি ভবন রয়েছে ব্যাংকটির।

একইভাবে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের রয়েছে ২০ তলা ভবন। আরও ভবন কেনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ব্যাংকটি।

কারওয়ান বাজারে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার বিশাল জমি। সাউথ ইস্ট ব্যাংকও টিসিবি ভবনের পাশেই তাদের প্রধান কার্যালয়ের ভবন নির্মাণ শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো এখন আর ভাড়া বাড়িতে শাখা খুলতে আগ্রহী নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজস্ব জমি বা ফ্লোর স্পেসে শাখা খুলছে। এজন্য কোনো কোনো ভবনের একাধিক ফ্লোরও কিনে নিচ্ছে তারা।

এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহিতা অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে জামানত হিসাবে রাখা জমি বা ভবন নিলামের মাধ্যমে গ্রহণ করে ব্যাংক। পরে তা বিক্রি না করে নিজস্ব সম্পদ হিসাবে রাখে।