লেনদেন ভারসাম্যে ‘স্বস্তি’

বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসায় বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ; চলতি হিসাবের ভারসাম্য রয়েছে উদ্বৃত্তের ধারায়।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2013, 10:39 PM
Updated : 17 May 2013, 01:39 AM

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ২৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১২ কোটি ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় এই চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত মনে করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ ভাল থাকায় এবং পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমে আসায় চলতি হিসাবে এই স্বস্তিদায়ক উদ্বৃত্ত।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা- বিআইডিএসের এই গবেষণা পরিচালক বলেন, “মূলত রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারার কারণেই বৈদেশিক লেনদেনে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্যের সারণীতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৮৬ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৬৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

অর্থাৎ, এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বাড়ার পাশাপাশি আমদানির ব্যয় কমায় ঘটতিও কমেছে বলেই জায়েদ বখত মনে করেন।

লেনদেন ভারসাম্যের সারণি অনুসারে (এফওবিভিত্তিক), এই নয় মাসে পণ্য রপ্তানি আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় এক শতাংশ।

এই সময়ে এক হাজার ৯৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর আমদানি বাবদে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৪২২ কোটি ডলার।

অবশ্য সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের ২১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চেয়ে বেড়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এক হাজার ১০২ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৯৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এই নয় মাসের আর্থিক হিসাবে ১৫৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সহায়তা বাড়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সরকারের আর্থিক হিসাবে।

জুলাই-মার্চ সময়ে ১০৫ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ।

একই সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও বিনিয়োগ) এসেছে ১৮ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ।

সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে লেনদেনের ভারসাম্যে ৩৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৪১ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।