ঋণ বিতরণে নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা: গভর্নর

ঋণ বিতরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করলে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গভর্নর আতিউর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2013, 10:01 AM
Updated : 16 May 2013, 10:09 AM

বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত ব্যাংকারদের সঙ্গে এক সভায় প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করে দেন তিনি।

বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে গভর্নর জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহকের ঋণঝুঁকির মান ইতিবাচক অবস্থায় না থাকলেও ঋণ অনুমোদন করছে ব্যাংকগুলো। কিছু কিছু ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রেও কোনো কোনো ব্যাংক বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করছে না।

বার বার সর্তক করার পরও এসব অনিয়ম চলতে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, “ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ঝুঁকি নিরসন ও জনগণের আস্থা অক্ষুন্ন রাখাসহ সার্বিকভাবে একটি স্থিতিশীল আর্থিক খাতের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

“তা না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তত্ত্বাবধানের হাত শক্তভাবেই প্রসারিত করতে দ্বিধা করবে না,” যোগ করেন আতিউর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার‌্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সভায় দেশে কার‌্যরত সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের তদন্তে দেখা গেছে কোনো কোনো ব্যাংক একক ঋণগ্রহিতার সীমা অতিক্রম করে ঋণ বিতরণ করছে।”

আবার কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহকের সম্পর্কে ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) প্রতিবেদন যাচাই করা ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করছে বলে জানান তিনি।

ডেপুটি গভর্নর বলেন, এতে একই গ্রাহকের কাছে অনেক অর্থ চলে যাওয়া এবং খেলাপি ব্যক্তির ঋণ পাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

“এটা যেমন আইনের ব্যতয় তেমনি ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও। একারণে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করা হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

সভায় শ্রেণীকৃত ঋণ হ্রাস করার বিষয়ে ব্যাংকের নির্বাহীদের আরো বেশি উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “মার্চ ত্রৈমাসিক শেষে ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ও হার কিছুটা বেড়েছে। শ্রেণীকৃত ঋণের হার বেড়ে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।”

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ক্রমহ্রাসমান হওয়ায় কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করে গভর্নর বলেন, “হতে পারে সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হরতাল ও বিশ্বমন্দার প্রভাবে এমনটি হচ্ছে।”

ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন নীতিমালার অজুহাতে ঋণ দেয়া যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেদিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

গভর্নর আরো বলেন, “তৈরি পোশাক ও নীট গার্মেন্টস শিল্পের যেসব ঋণ হিসাব প্রকৃতই স্টকলটের কারণে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করার এবং নতুন ঋণ প্রদানের বিষয়টি নমনীয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি ব্যাংকিং সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।”

এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিজিএমইএর সমন্বয়ে গঠিত সহায়ক কমিটির সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, “মেয়াদি ঋণের বিষয়ে ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালায় পরিবর্তন আনার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি।

এছাড়া খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দিকনির্দেশনা চেয়েছি।”