উত্তরসূরির জন্য নির্দেশনাও থাকবে বাজেটে: মুহিত

পরবর্তী সরকারের জন্য নির্দেশনাও আগামী বাজেটে রেখে যেতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2013, 08:38 AM
Updated : 16 May 2013, 08:57 AM

সংসদে বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপনের এক মাসের কম সময় আগে বৃহস্পতিবার এক সভায় নিজের এই পরিকল্পনা জানান তিনি।

সপ্তমবারের মতো বাজেট প্রস্তাব করতে গিয়ে এই প্রথম ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছেন বলেও এনবিআরের পরামর্শক কমিটির ওই সভায় জানান মুহিত।

হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে উচ্চাভিলাষী কিছু নেই। তবে আগামী সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হবে।

বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট সংসদে প্রস্তাব করা হবে আগামী ৬ জুন, যে বাজেটের বাস্তবায়নের প্রায় অর্ধেক সময় নতুন সরকার ক্ষমতায় থাকবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী বাজেটের আকার ঠিক করেছে ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা।

মুহিত বলেন, “আমি এর আগে ছয়টি বাজেট দিয়েছি, এবার সপ্তমবার। আগামী বাজেটটা খুবই কষ্টকর, অস্বস্তি বোধ করছি।”

অস্বস্তির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর এবং হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবকে দেখান তিনি।

সরকারের শেষ বাজেটে ‘খুব বেশি’ পরিবর্তন হবে না বলে জানান তিনি।

প্রায় প্রতিবছর বাজেটের আগেই এনবিআরের পরামর্শক কমিটির সভা হয়, যেখানে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বাজেটের বিষয়ে তাদের সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

বরাবরের মতোই এবারের সভায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর, শুল্ক কমানো ও নানা ধরণের সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনার সুপারিশ করেন।

মুহিত বলেন, “এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম কর আদায় হয় বাংলাদেশে। তারপরও আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কয়েকবছর আগেও কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ১০, এখন সেটা ১৩।”

আলোচনায় কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে জরিমানা কমানোর সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার জন্য বর্তমানে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের। যে কোনো সময় জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।

“বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তা বলা মুশকিল। এ নিয়ে নানা ধরনের পরিমাপ রয়েছে। ভ্যাট আইন হওয়ার পর কালো টাকার পরিমাণ কমে আসবে।”

বর্তমানে আয়করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।

তবে বাংলাদেশে আয়কর পদ্ধতির আমুল পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন মুহিত। এ বিষয়ে তার ‘ব্যক্তিগত’ মতামত পরবর্তীতে জানাবেন বলেও জানান তিনি।    

আগামী বাজেটে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে- এ আভাস দিয়ে মুহিত আশ্বস্ত করেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর খরচ জোগাতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ কমবে না।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিতেএই সভার শুরুতেই আগামী বাজেট নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ পড়ে শোনান এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্‌মদ।

এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশের মধ্যে ৯৭টি প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর বিষয়ক এবং পরোক্ষ করের মধ্যে ১৮৯টি সুপারিশ আমদানি শুল্ক ও ১৩১টি মূল্য সংযোজন কর বিষয়ক সুপারিশ।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মুল্যস্ফীতিও ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”

এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাজেটে বাস্তবভিত্তিক কর্ম-পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অর্থমন্ত্রীর মতো এফিবিসিসিআই সভাপতিও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে বিরোধীদলের হরতাল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সংলাপের পক্ষে মত দেন।

“আমরা আশান্বিত যে, জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বিরোধীদলীয় নেতা শর্তহীন আলোচনায় সম্মতি দিয়েছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা উভয়কেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ দুর্ঘটনা কমাতে পরিকল্পনামাফিক শিল্পায়ন গড়ার জন্য স্পেশাল ইকনোমিক জোন (এসইজেড) গড়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে তাগাদা দেন।

“আপনি সাতটি এসইজেড গড়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার একটিও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই আগামী বাজেটে এসইজেড গড়ার জন্য বরাদ্দ রাখুন।”

‘কমপ্লায়েন্স’ কারখানা গড়ে তুলতে ৫ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম।